ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন মানব সভ্যতা। ম্যালেরিয়া চিকিৎসার প্রাকৃতিক উৎস। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মন্ডিত জীববৈচিত্র আর আগ্নেয়গিরি। এসবের জন্যই পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতসারি আন্দিজপর্বতমালা বৈচিত্র আর স্বতন্ত্রতায় অনন্য।
নাম করণ
এশিয়ার বাহিরে উচ্চতম পর্বতসারি হলো আন্দিজ। আন্দিজ নামকরণ নিয়ে নানা মতবাদ প্রচলিত আছে। অধিকাংশের মতে ‘কোয়েচা’১(Quecha) ভাষার শব্দ অ্যানটি (Anti) হতে এর নামকরণ হয়েছে আন্দিজ। যা উচ্চতম স্থান, ঝুটি বা পর্বতচূড়ায় অথবা তরঙ্গশীর্ষে পৌঁছানো এমন অর্থে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেকে দাবী করেন Anti Suyu হতে এসেছে আন্দিজ শব্দটি। যা আন্দিজের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি। যেখানে ইনকাদের (Inca) বসতি ছিল। অন্য আরেকটি মতানুসারে আন্দিজ শব্দটি স্পেনিশ শব্দ ‘আনদেন’(Anden) হতে এসেছে। যার অর্থ চত্বর (Terrace)। যে চত্বরগুলো সাধারণত ইনকারা এবং সমসাময়িক অন্যান্যরাও শস্য চাষ ও মাড়াইয়ের জন্য ব্যবহার করতো। কিছু কিছু ইতিহাসবিদ আবার ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাদের মতে আন্দিজ শব্দটি Quecha ভাষার শব্দ ‘Anti’ হতেই এসেছে তবে তার অর্থ পূর্ব (East)। আরও একটি মতানুসারে Quecha ‘Anta’ শব্দ হতে আন্দিজ শব্দটি এসেছে যা তামা (Copper)কে নিদের্শ করে। এক্ষেত্রে এই মতটি বেশি গ্রহণযোগ্য কারণ প্রাচীন Aymara ভাষায় শব্দটি তামার বর্ণকে বোঝায়।

ভৌগলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য
আন্দিজ পর্বতশ্রেণী পর্বতের মেরুদণ্ড স্বরূপ। যা দক্ষিণ আমেরিকাকে নাটকীয়ভাবে দুটি অংশে উত্তর থেকে দক্ষিণে বিচ্ছিন্ন করে আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু এবং ভেনিজুয়েলা এই সাতটি দেশ অতিক্রম করেছে। ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করে প্যাটাগনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৮০৪ মিটার প্রশস্ত। যার গড় উচ্চতা প্রায় ৩,৯৬২ মিটার বা ১৩,০০০ ফুট। ভেনিজুয়েলার উপকূলে ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত আরুবা (Aruba), বোনায়ার (Bonaire) এবং কুরাসাও (Curaçao) দ্বীপপুঞ্জগুলি আন্দিজ রেঞ্জের সাগরে নিমজ্জিত শিখরগুলিকে নির্দেশ করে। যা সর্বাধিক উত্তরের প্রান্তকে প্রতিনিধিত্ব করে । এই পর্বত চূড়াগুলো এক সারিতে না হয়ে সমান্তরাল এবং আড়াআড়িভাবে বিস্তৃত।
আন্দিজকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। ভেনিজুয়েলা, উত্তর ইকুয়েডর এবং কলম্বিয়া জুড়ে বিস্তৃত উত্তর আন্দিজ। এটি তিনটি পর্বতশ্রেণী নিয়ে গঠিত যা একে অপরের সমান্তরাল: কর্ডিলেরা ওসিডেন্টাল (Cordillera Occidental), কর্ডিলেরা সেন্ট্রাল (Cordillera Central) এবং কর্ডিলেরা ওরিয়েন্টাল (Cordillera Oriental)। এই পর্বতমালাগুলিতে অনেকগুলি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। যার লাভা মধ্য মালভূমিটিকে বিভিন্ন প্রধান অববাহিকা থেকে পৃথক করেছে। কর্ডিলেরা ওসিডেন্টাল উপকূলরেখার সাথে সমান্তরাল এবং উচ্চতা ৩,৩৩৪ মিটার। সেন্ট্রাল কর্ডিলেরা পর্বতমালাটি এই অঞ্চলে সর্বাধিক উচ্চতম এবং আয়তনে সবচেয়ে ছোট। যা ৬৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির অবস্থান এখানেই।
মধ্য আন্দিজের পর্বতগুলো প্রশস্ত, উচ্চতম ও শুষ্ক। আর্জেন্টিনা, চিলি, বলিভিয়া ও পেরু জুড়ে বিস্তৃত মধ্য আন্দিজ। Altiplano অংশটি উত্তরের দুইটি রেঞ্জ কর্ডিলেরা ওসিডেন্টাল ও কর্ডিলেরা ওরিয়েন্টাল এর সাথে সীমান্ত রক্ষা করে চলেছে। এখানেই রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম হ্রদ ‘টিটিকাকা’ যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,৮১২ মিটার উপরে অবস্থিত।
দক্ষিণ আন্দিজ আর্জেন্টিনা, চিলি ও প্যাটাগনিয়া২ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এখানকার বেশিভাগ পর্বতগুলোই হিমবাহ (Glaciers), বরফ ক্ষেত্র (Ice Fields), হ্রদ, সমুদ্রের খাঁড়ি (Fjords), নদী দ্বারা পরিপূর্ণ। এখানেই রয়েছে পশ্চিম ও দক্ষিণ হেমিসফেরিয়াসের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট অ্যাকনকাগুয়া। সমুদ্রতল থেকে যার উচ্চতা ৬,৯৬১ মিটার। পর্বতটি আর্জেন্টিনায় অবস্থিত।
মোটকথা আন্দিজ পর্বতমালা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম প্রান্ত বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত এবং এর সাথে সমান্তরাল ও আড়াআড়িভাবে আরও অনেক ছোট ছোট পর্বতসারির জন্ম হয়েছে। যার প্রতিটিই আন্দিজের সাথে শিকলের মতো সংযুক্ত। পর্বতের শিকলের মতো এই গঠনটিকেই বলা হয়েছে কর্ডিলেরা (Cordillera) যা স্পেনিশ শব্দ Cordilla হতে এসেছে এবং এর অর্থ দড়ি ।

ধারণা করা হয় আন্দিজ পর্বতশ্রেণীর জন্ম হয়েছে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে। যখন দক্ষিণ আমেরিকান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় টেকটোনিক প্লেটগুলির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এটি মূলত অনেকগুলো পর্বতশ্রেণীর সমষ্টি যা একে অন্যের সাথে যুক্ত রয়েছে একটি বিশেষ অবয়বে। যাকে বলা হয় Orographic Knots । যদিও আন্দিজ প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে বর্তমান আকার ধারণ করে তবে তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল ১৪০ মিলিয়ন বছর আগে। অবস্থানগত কারণে পর্বতশ্রেণীটি প্যাসিফিক রিং অব ফায়ারের পাশে অবস্থিত। এ জায়গাটিকে বলা হয়ে থাকে ঘোড়া-জুতোর আকারের (horse-shoe shaped zone) অঞ্চল। যা উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরি প্রবণ ।
জলবায়ু
আন্দিজ পর্বতমালা দেয়ালের মতো প্রশান্ত মহাসাগর ও মহাদেশের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। যা এ অঞ্চলের জলবায়ুতে বেশ প্রভাব বিস্তার করে। আন্দিজের অঞ্চলগুলোর জলবায়ু নির্ভর করে এর অবস্থান, উচ্চতা ও সমুদ্রের নৈকট্যতার উপর। দক্ষিণ অংশ অপেক্ষাকৃত বৃষ্টি প্রবণ এবং শীতল। মধ্য অংশ শুষ্ক যেখানে তাপমাত্রার বৈচিত্রতা লক্ষ্য করা যায়। উত্তর অংশ বৃষ্টি প্রবণ ও উষ্ণ। আন্দিজ পর্বতমালায় দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় হিমবাহের ৯৯ শতাংশ রয়েছে। যেখানে বরফের স্থায়ী নদীগুলি এতটাই উচ্চতর স্থানে রয়েছে যা সাধারণত ক্রান্তীয় অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত নমনীয় তাপমাত্রার দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
আন্দিজে প্রাথমিক মানব বসতির খুব বেশি প্রমাণ নেই। আনুমানিক ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ বছর পুরোনো হবে এখানে মানুষের বাস। যদিও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে সেই সময়ের আগেও মানুষের আবাস থাকতে পারে। অতি উচ্চতা এবং রুক্ষ ভূখণ্ড আর অক্সিজেনের স্বল্পতার জন্য এখানে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য। কিন্তু স্থানীয় পাহাড়ের রাখালরা ১৭,০০০ ফুট উচ্চতায় বেঁচে থাকতে পেরেছে কারণ তাদের দেহের কোষ পরির্বতিত হয়ে তাদের অভিযোজিত করতে সক্ষম করেছে। প্রায় পনের শতকে এই অঞ্চলে ইনকাদের সভ্যতা গড়ে উঠে। ইনকারা একটি শক্তিশালী সাম্রাজ তৈরি করতে পেরেছিল।
স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
আন্দিজ পর্বতমালার আছে বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। আন্দিজ কেবল একটি পর্বতশ্রেণী নয়। এটি তার চেয়েও বেশি কিছু। এটা মূলত অনেক পাহাড়-পর্বতকে একে অপরের সাথে শিকলের মত যুক্ত করে অভিনব গঠন তৈরি করেছে। যেখানে চমৎকার মালভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এরকমই একটি হলো বলিভিয়ার আলটিপ্লানো (Bolivian Altiplano) যার গঠন ও পরিবেশ মানব বসতি গড়ে তুলতে সহায়ক। বর্তমান আধুনিক পৃথিবীর লাপাজ (La Paz), কুয়েটো (Quito), অ্যারিকুইপা (Arequipa), কুয়েঙ্কা (Cuenca), সুক্রে (Sucre) এবং মেডিলিয়ন (Medellin) শহরগুলো আন্দিজের মালভূমির উপরেই প্রতিষ্ঠিত।
আন্দিজের অধিকাংশ পর্বত চূড়াগুলোই আগ্নেয়গিরি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অবস্থানও এখানে। ওজোস দেল সালাদো (Ojos del Salado) দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমভাগে পূর্ব চিলিতে অবস্থিত একটি বিশালাকার আগ্নেয়গিরি। এটি অ্যাটাকামা মরুভূমির পূর্বে আন্দিজ পর্বতমালাতে চিলি ও আর্জেন্টিনার সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৬,৯০০ মিটার। পর্বতটির জ্বালামুখে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি হ্রদ আছে যা সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত জ্বালামূখ হ্রদ।
আন্দিজ প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম, উচ্চতম, প্রশস্ততম এর সমাহারে ভরপুর। এখানেই রয়েছে পৃথিবীর নাব্যতা সমৃদ্ধ উচ্চতম হ্রদ ‘টিটিকাকা’। সালার ডি উনুনি (Salar de Uyuni) হচেছ পৃথিবীর বৃহত্তম লবণ মরুভূমি বা সল্ট পেন (salt pans) যা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ৩,৬০০ মিটার উঁচু এবং ভলিভিয়াতে অবস্থিত।

আন্দিজ দেয়ালের মত দাড়িয়ে থাকায় প্রশান্ত মহাসাগেরর শীতল বাতাস এর গায়ে বাধা প্রাপ্ত হয়। আর সে জন্যই এর পশ্চিম অংশ থেকে যায় শুষ্ক। যার ফলে এখানে তৈরি হয়েছে অ্যাটাকামা মরুভূমি (Atacama Desert) আর পূর্বাংশে তৈরি হয়েছে অসাধারণ ঢালু অংশ যেখানেই সৃষ্টি হয়ে আমাজানের মতো বৃহৎ বৃষ্টি অরণ্যের। আর এই অরণ্যসহ গোটা অঞ্চলের প্রাণদায়ী আমাজান নদীর জন্মও আন্দিজ পর্বতশ্রেণী হতে।

অনন্য জীববৈচিত্রের স্বর্গভূমি আন্দিজ। যে তিনটি অঞ্চলে আন্দিজকে ভাগ করা হয়ে থাকে তা হলো ট্রপিক্যাল আন্দিজ, শুষ্ক-রুক্ষ আন্দিজ এবং আর্দ্র বা বৃষ্টি প্রধান অঞ্চল। আর এই সুবিশাল অঞ্চলগুলোতে রয়েছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী যার ভিতর ১৩ শতাংশের আবাস কেবল এখানেই, প্রায় একই পরিমান সরীসৃপ এর মধ্যে ৪৫% যা কেবল এখানেই দেখা যায়, ৪০০ প্রজাতির মাছ, ১৭০০ প্রজাতির বেশি পাখি, ১০০০ এর বেশি প্রজাতির উভচর এবং ৩০,০০০ হাজারেরও বেশি উদ্ভিদ বৈচিত্র। যার অধিকাংশই পৃথিবীর অন্যখানে দেখা যায় না। এখানেই আছে অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বেশ কিছু স্তন্যপায়ী। যার ভিতর গুনাকো (Guanaco), চিনচিলা (Chinchillas), আলপাকা (Alpaca), লামা (Llama), তারুকা ও হিউমুল (Taruca And Huemul), হলুদ লেজ যুক্ত উলি বানর (Yellow-tailed Woolly Monkey), স্পেকটেক্যাল ভাল্লুক (Spectacled Bear), দক্ষিণ আমেরিকান শিয়াল, গিনিপিগ (Guinea Pig), পাহাড়ি টাপির (Mountain Tapir), ভিকুইনিয়া (Vicuña) উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ আমেরিকার বিপন্ন প্রায় কনডর (Condor) শকুনের আবাসও এই আন্দিজ পর্বতমালায়।

চিনচুনা পাবসেন্স (Cinchona pubescens) গাছ কেবল এ অঞ্চলেই পাওয়া যায় । যা থেকে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক কুইনাইনের কাঁচামাল আসে। এছাড়াও কলাম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া এবং চিলির উচ্চ ভূমিতে রয়েছে পলিলেপিস (Polylepis) এর বনাঞ্চল। যা এর প্যাচানো আকার, সুগন্ধি ফুল ও বাকলের জন্য বিখ্যাত। এটি গোলাপ পরিবারের একটি উদ্ভিদ।
আলু ও টমেটোর মত সর্বাধিক ব্যবহৃত সবজি দুটির আদি নিবাস হলো আন্দিজ। প্রায় ৩,৮০০ প্রজাতির আলু কেবল পেরুতেই পাওয়া যায়। কোকা (Coca) এর আদি নিবাসও আন্দিজের পশ্চিম অংশে। ইনকারা কোকা এর চাষ ও ব্যবহার করতো। কোকা থেকে তৈরি এক ধরণের চা আন্দিজের উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত মানুষেরা পান করে থাকে যা উচ্চতা জনিত শারীরিক সমস্যা প্রশমন করে।
যেমনি প্রাকৃতিক বৈচিত্র আন্দিজকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মন্ডিত করেছে তেমনি এখানেই আছে পৃথিবীর বৃহত্তম স্বর্ণ খনি ইয়ানাকোচা (Yanacocha)। যা পেরুতে অবস্থিত। চিলি ও পেরু যৌথভাবে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক তামা উৎপাদন করে থাকে। এখানে আরও রয়েছে রূপা ও মলিবডেমারে বিশাল মজুদ।

যদি বলা হয় পৃথিবীর সত্যিকার সর্বোচ্চ বিন্দু কোথায়। তবে সেটি হিমালয়ের এভারেস্টে হবে না। আমাদের গ্রহের নিরক্ষীয় স্ফীতির কারণে, ইকুয়েডরের মাউন্ট চিম্বোরাজো এর শিখরটি প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে তার কেন্দ্র অবধি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। আর তাই চিম্বোরাজোতেই সর্বোচ্চ বিন্দুটি। মাউন্ট চিম্বোরাজো ইকুয়েডর এর সর্বোচ্চ পর্বত। প্রায় ১৫০০ বছর আগে চিম্বোরাজো হতে আগ্নেয় উদগিরণ হয়েছিল।
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হারানো শহর মাচু-পিচুর অবস্থান আন্দিজের বুকেই। এটি ইনকাদের একটি শহর। যা পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার (Valle de Urubamba) ওপরে একটি পর্বতচূড়ায় অবস্থিত। শহরটি ১৪৫০ সালের দিকে নির্মিত হয়। কিন্তু এর একশ বছর পর ইনকা সভ্যতা যখন স্পেনীয়দের দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন এটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। কয়েক শত বছর অজ্ঞাত থাকার পর ১৯১১ সালে হাইর্যাম বিঙহ্যাম ( Hiram Bingham) নামে এক মার্কিনি ঐতিহাসিক এটিকে আবার সমগ্র বিশ্বের নজরে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে মাচু-পিচু পর্যটকদের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। উপন্যাস আর কল্পকাহিনীর সোনার শহর এল ডোরাডোর কাহিনীও এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।
গবেষক, পর্যটক, অভিযাত্রী ও পর্বতারোহীদের জন্য অসাধারণ একটি স্থান হলো আন্দিজ। যারা উচ্চতা পছন্দ করেন তাদের স্বর্গরাজ্য বলা যেতে পারে। ক্লাইম্বিং, হাইকিং, শুভ্র জলে র্যাফটিং, সাইক্লিং, ঘোড়া চালানো, স্কিইং, মহাকাশ পর্যবেক্ষণসহ অনেক কিছুর জন্যই বিখ্যাত পৃথিবীর দীর্ঘতম ও বর্ধনশীল পর্বতসারি ‘আন্দিজ পর্বতমালা’।
পাদটিকা :
১ Quecha পেরুর আদিবাসিদের একটি ভাষা। যা দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ আদিবাসি লোকেরাই ব্যবহার করে। ভাষাটি ইনকাদের ভাষা হতে এসেছে বলে অনেক গবেষক ধারণা করেন।
২ বিরাট জনবহুল অঞ্চল। আর্জেন্টিনা ও চিলি দ্বারা ভাগ করা এই অঞ্চলে আন্দিজ পর্বতমালার দক্ষিণাংশের অংশ এবং সেইসাথে আন্দিজের দক্ষিণাংশের পূর্বদিকের মরুভূমি, পাম্পাস এবং তৃণভূমিতে অবস্থিত। প্যাটাগনিয়ায় দুটি উপকূল রয়েছে: প্রশান্ত মহাসাগর এবং পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চল। আন্দিজ থেকে আটলান্টিক পর্যন্ত যা কলোরাডো ও বারকানস নদীগুলি সাধারণত আর্জেন্টাইন প্যাটিগনিয়ার উত্তরের সীমা বলে মনে করা হয়। তিয়াররা ডেল ফুয়েগো দ্বীপপুঞ্জ কখনও কখনও Patagonia অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেশিরভাগ ভূগোল ও ইতিহাসবিদ Reloncaví এস্তোরিয়ায় চিলিয়ান প্যাটাগনিয়ার উত্তরের সীমা চিহ্নিত করেছেন।
তথ্য সূত্র : Livescience- Kim Ann Zimmerman, Chimu adventure, Britannica, World atlas, etc.
ফিচার ছবি : Julian Mora
অন্যান্য ছবি : Florencia Chacon, Pierre-Ricadat, Diego Aguilar, Thiago Sanchez, Adrian Dascal
তথ্যসমৃদ্ধ, সহজবোধ্য ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছিল যেন চোখের সামনে আন্দিজের বিভিন্ন বর্ণিত জায়গাগুলি দেখছি।
লেখকের আরো লেখা পড়বার আশা রাখি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।