আমাদের পাহাড় – সবুজ পাহাড়। পর্বতের কথা বলতে গেলে বাংলাদেশে সেই অর্থে কোন পর্বত নেই । তুষার ঢাকা কোন শুভ্র শিখর নেই আমাদের । তারপরও যা আছে তাকে পর্বত বলে আমরা তৃপ্ত হই। হ্যা, এক অর্থে এগুলোও পর্বত। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুটের অধিক উচ্চতা সম্পন্ন স্থানকে পর্বত বলার আন্তর্জাতিক একটা রেওয়াজ আছে। তবে শুধু উচ্চতা হলেও চলবে না, থাকতে হবে টপোগ্রাফিক্যাল প্রমিনেন্স। স্বতন্ত্র শৃঙ্গ হওয়ার জন্য একটি চূড়ার কম করে হলেও ৩০০ ফুট প্রমিনেন্স থাকতে হবে। এটি নিয়েও বির্তক আছে। তবে আমাদের মতো কম উচ্চতা ও তুলনামূলক কম পাহাড়ি দেশের এ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় কেননা এই শর্তগুলোর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও আছে। বির্তকের দিকে যাবো না। আজ আমরা আমাদের অন্যতম একটি পর্বতসারির চার বোনকে নিয়ে কথা বলবো। এদের নামের সঙ্গেও অসাধারণ একটা মিল আছে। তাই আমাদের এই চারটি পর্বতকে চার বোন হিসেবে উল্লেখ করেছি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে ১৮টি পর্বতসারি রয়েছে। এর ভিতর অন্যতম একটি পর্বতসারি গিলাছড়ি। প্রায় ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পর্বতসারিটি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত। গিলাছড়ি রিজ বা পর্বতসারির প্রথম ২৫০০ ফুট উচ্চতার পর্বত শৃঙ্গ হিসেবে সিপ্পি আরসুংকে (এসআরটিএম উপাত্ত অনুযায়ী ২৯৯৯ ফুট) চিহ্নিত করা যায়। সিপ্পি আরসুংয়ের উত্তর দিকে আরও তিনটি ২০০০ ফুট উচ্চতার পর্বত রয়েছে। পর্বতসারিটির মাঝের অংশ পূর্ব দিকে সরে গিয়ে আবার কিছুটা পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়েছে। যার জন্য ধনুকের মতো একটা আকার তৈরি হয়েছে। পর্বতসারিটি উত্তর দিকে কাপ্তাই হ্রদের সাথে মিশেছে আর দক্ষিণ দিকে তাজিংডংয়ের পর অনুচ্চ পাহাড় সারি ধরে রেমাক্রি অববাহিকার কাছাকাছি গিয়ে মিশেছে। তাই তাজিংডংয়ের পূর্ব-দক্ষিণ দিকের ডোতাউং পাহাড়ই গিলাছড়ি রিজের সমাপ্তি রেখা টেনেছে বলা যেতে পারে। রেঞ্জ হিসেবে এটি পলিটাই বা পলিতাই রেঞ্জ (Politye)।
বেশ বৈচিত্রপূর্ণ অরণ্যসঙ্কুল দীর্ঘ পবর্তসারি গিলাছড়ি। এর প্রথম অংশের পূর্ব দিকে রাইনখিয়াং অববাহিকা। মাঝ বরাবর থেকে শেষ অবধি রেমাক্রি অববাহিকা। পশ্চিম দিকে রয়েছে সাঙ্গু নদী। আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বেশ কিছু শৃঙ্গের অবস্থান এখানেই। যে চার বোনের কথা বলেছিলাম তারা হলো- কেওকারাডং, তাংগিওডং, লাখুডং ও তাজিংডং। প্রথম তিন জন ৩০০০ ফুট উচ্চতার পর্বত আর শেষের জনের বাস্তব উচ্চতা এত না হলেও ভুল তথ্যে খেতাব নিয়ে সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এই চার জনের অবস্থান গিলাছড়ি রিজেই। একে অপরের সাথে হাত ধরাধরি করে পর্বতসারিটির শেষাংশটিকে করেছে অনন্য ও সমৃদ্ধ। মোটাদাগে পর্বতসারিটির পশ্চিম দিক ঢালু এবং আরোহণের জন্য বেশ সুবিধাজনক আর পূর্ব দিকটি অপেক্ষাকৃত খাড়া। অর্থ্যাৎ পূর্ব দিকটি প্রতিবাত (Windward) আর পশ্চিম দিকটি অনুবাত (Leeward)
গিলাছড়ির উভয় পাশেই গহিন অরণ্য। বিশেষত সিপ্পি আরসুংয়ের পূর্ব পাশে রাইনখিংয়া নদী/খাল পর্যন্ত এবং রাইনখিয়াং এর পূর্ব হতে সীমান্ত বরাবর বটিয়াং উটানচটিয়া রিজ পর্যন্ত গহিন অরণ্য। গিলাছড়ি যে জায়গায় বাঁক নিয়ে ধনুকের মতো আকার নিয়েছে সেখানেই লাকু তং (বড়থলি পাহাড়) । এখান থেকে অল্প দক্ষিণ দিকে আরেকটি পর্বতসারি দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয়ে পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে যাকে বলে সাকুদং রিজ। আমরা একে লম্বুক/লমবক রো হিসেবেই জানি। মোটাদাগে লমবক রো হতেই রুমা খাল ও রেমাক্রি খালের জন্ম। রুমা খালের আরও একটি উপখাল আরও পূর্ব হতে এসেছে বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। খালগুলোর অনেক ট্রিবিউটারি বা উপখাল কিম্বা জলদায়ি থাকার জন্য সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল এটিই তার জন্মস্থান। গিলাছড়ি, লমবক রো ও পূর্ব পাশের সীমান্তের উচ্চ পর্বতগুলোর মাঝখানেই রয়েছে অসাধারণ একটি জলাশয়। রাইনখিয়াং হ্রদ। পলিতাই রেঞ্জের প্রায় ৬ মাইল দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এর অবস্থান। এক সময় ঘন অরণ্য এবং হাতিসহ অনেক জীবজন্তুর পদচারনায় মুখরিত ছিল অঞ্চলটি। ১৮৭৫ সালে সাঙ্গু সাব-ডিভিশনের অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার লেফটেন্যান্ট গর্ডন এটি প্রথম আবিস্কার করেন। তার বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এটি ১ মাইল দীর্ঘ এবং সিকি মাইল প্রশস্ত। তিনি আরও বর্ণনা করেন, পার্শ্ববর্তী বনের হাতিদের জন্য এটি বিশ্রাম ও প্রমোদের জায়গা। হাতিরা বৃহৎ গাছগুলো ছাড়া বাকি সব উপরে ফেলে ঘন জঙ্গলের ভিতর চমৎকার ফাঁকা জায়গা তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেছেন, স্থানীয় মানুষ এই হ্রদের জলে নামতে চায় না এবং তাঁকেও বাধা দিয়েছে। মাছে পরিপূর্ণ এই হ্রদ।
এছাড়া রুমা খাল গিলাছড়ি রিজের ফাঁক গলে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে সাঙ্গু নদীতে মিশেছে। লমবক রো ও গিলাছড়ির রিজের প্রায় মাঝ বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে রেমাক্রি খাল। এই খাল ও দুই পাশের উচ্চ পাহাড়ের জন্য এখানটায় ঘন অরণ্যের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মানব বসতী বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিক বন ও বনের প্রাণী প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
পশ্চিম পার্শ্বটি অপেক্ষাকৃত ঢালু এবং অরণ্য সমৃদ্ধ। অনেকগুলো ছোট খাল ও ছড়া গিলাছড়ি থেকেই জন্ম নিয়েছে। বিশেষত একটি খাল এই পর্বত সারির উত্তরাংশ হতে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে সেটি হলো পাইন্দু খাল। এই পাশে আরও একটি উল্লেখযোগ্য খাল হচ্ছে চেমা খাল যা কেওকারাডং থেকে জন্ম নিয়ে সাঙ্গুতে মিশেছে।
এবার আসা যাক সেই চার বোনের কথায়।
কেওকারডং (Keokradong):
কেওকারাডং, ক্রেওক্রাডং বা কেওক্রাডং বাংলাতে এভাবেই এর নাম লেখা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেইল হচ্ছে কেওকারাডং আরোহণের ট্রেইল। প্রাচীন পুস্তকাদিতেও কেওকারাডংয়ের কথা উল্লেখ আছে। R. H. Sneyd Hutchinson এর বর্ণনায় কেওকারাডংয়ের কথা এসেছে। তিনি পর্বতটির উচ্চতা উল্লেখ করেছেন ৪০৩৪ ফুট। Hutchinson পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকুরি সূত্রে প্রথম আসেন ১৮৯০ সালে স্বল্প সময়ের জন্য। ১০ বছর পর আবারও তাঁর পোস্টিং হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে। তিনি কেওকারাডংকে সর্বোচ্চ বিন্দু বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে আরও দুটি পর্বতের কথা বলেছেন যথাক্রমে রাক্ষামইন তং (Rakhamoin 3017 feet) ও পলিতাই (Polyrai 2857 feet)। তাঁর বিবরণে বলেছেন, উপত্যকাগুলো ঘন ভার্জিন ফরেস্টে (যে অরণ্য স্বাভাবিক আদিম অবস্থায় রয়েছে) আবৃত এবং সকল প্রকার বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল। তিনি আরও বলেছেন, মানব বসতী বৃদ্ধির জন্য বন ও বনের জীববৈচিত্র কমে আসছে। হাতি, গন্ডার, বাঘ থেকে আরও অনেক প্রাণীর কথাই আমরা ইউরোপিয় লেখকদের লেখায় পাই বিশেষত Capt. T.H. Lewin এর বর্ণনায় । ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত তাঁর বই ‘Hill Tracts of Chittagong & The Dwellers Therein’ এ হাতি ও গন্ডার শিকারের কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও কালের প্রভাবে মানুষের কারণেই সব হারিয়ে গেছে।
আমরা এক সময় পাঠ্য পুস্তকেও এই পাহাড়টিকে সর্বোচ্চ পর্বত হিসেবে পড়েছি। অবস্থানগত কারণে কেওকারাডং স্থানীয় অধিবাসী ও ভ্রমণকারী সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। অধুনা কেওকারাডংয়ের এই ট্রেইলটিই পূর্ব পাশের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলটির সাথে যোগাযোগের লিংক হিসেবে কাজ করছে। কেওকারাডং নামটি এসেছে মারমা ভাষা থেকে। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে মারমা ভাষায় কেও মানে পাথর, কাড়া মানে পাহাড় এবং ডং মানে উঁচু। অর্থাৎ কেওক্রাডং মানে দাঁড়ায় উঁচু পাথরের পাহাড়। এই ব্যাখ্যার সাথে আমার দ্বিমত আছে। ডং উঁচু বলা হয়েছে কেওকারাডংয়ের ক্ষেত্রে আবার তাজিংডংয়ের ডং কে বলা হয়েছে পাহাড়। তাহলে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হওয়া যায় না।
এসআরটিএম (Shuttle Radar Topography Mission) উপাত্ত এবং জিপিএস গণনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী কেওকারাডংয়ের উচ্চতা ১,০০০ মিটারের বেশি নয়। যদিও সেনাবাহিনী কর্তৃক একটি ফলকে এর উচ্চতা উল্লেখ করা হয়েছে ৩,১৭২ ফুট। অনেক অভিযাত্রি এর উচ্চতা পরিমাপ করেছেন এবং ভিন্ন ভিন্ন উপাত্ত পেয়েছেন। তবে এই পর্বতটি যে ৩০০০ ফুট উচ্চতার তা সকলের প্রাপ্ত উপাত্ত হতে প্রমাণিত। এসআরটিএম উপাত্ত হতে কেওকারাডংয়ের উচ্চতা আসে ৩২০৫ ফুট। যা হোক অভিযাত্রিদের উপাত্ত হতে পাওয়া উচ্চতা ৩২৩৫ ফুট অনুযায়ী কেওকারাডং পঞ্চম উচ্চতম পর্বত।
কেওকারাডংয়ের চূড়া হতে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বের উচ্চ পর্বতগুলো সহজেই দৃশ্যমান হয়। ‘লমবক রো’-এর পর্বতগুলো সহজেই দৃশ্যমান ও সনাক্ত করা যায়। এছাড়াও পশ্চিম দিকের বান্দরবান পর্বতসারির পর্বত শৃঙ্গগুলোও মেঘ ও কুয়াশা মুক্ত আকাশে ভালভাবেই দৃশ্যমান হয়। সে অর্থে কেওকারাডংই একমাত্র পর্বত যেখান থেকে আমাদের অধিকাংশ পর্বতগুলোর চমৎকার একটা ভিউ পাওয়া যায়। কেওকারাডংয়ের পশ্চিম-উত্তর পাশেই প্রকৃতিক ভাবে সৃষ্ট একটি হ্রদ রয়েছে। যার নাম ‘বগাকাইন’। কেওকারাডং আরোহণ করতে হলে বগাকাইন বেজ ক্যাম্পের মতো কাজ করে। বর্তমানে এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাম্পসহ স্থানীয় অধিবাসীদের গ্রাম রয়েছে। পর্বতটির এই পার্শ্ব হতেই একটি খালের জন্ম। কেওকারাডং আরোহণ কালে আমরা চিংড়ি ঝর্ণা নামে একটি জলধারা দেখতে পাই। এই চিংড়ি ঝর্ণার জলধারাই এবং এর সাথে আরও ট্রিবিউটারি যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে চেমা খালের। চেমা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বলি পাড়ার কাছে সাঙ্গু নদীতে মিলিত হয়েছে। কেওকারাডংয়ের পূর্ব পাশেও একটি ঝর্ণা রয়েছে। বর্ষায় ঝর্ণাটি প্রাণ পায় এবং ঝোপঝাড়ের আড়ালে থাকার কারণে অধিকাংশ ভ্রমণকারীর দৃষ্টিগোচর হয় না।
তাংগিওডং (Tangiodaung):
তাংগিওডং নামে খুব কম মানুষই একে জানে (তাংজিওডং নামে একে উচ্চরণ করা যেতে পারে)। অন্য একটি নামের আড়ালে তার প্রাচীন নামটি ঢাকা পরে গেছে। কেওকারাডংয়ের ঠিক দক্ষিণ দিকে এর অবস্থান। তাংগিওডংয়ের প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে এর আকার। অন্যান্য পর্বতের মতো তার কোন শৃঙ্গ নেই বরং উপরিভাগটা অপেক্ষাকৃত সমতল। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আমি কপিতল বা কেপিটলয়ের কথা বলছি। গিলাছড়ি রিজের পূর্ব পার্শ্ব হতে তাংগিওডংকে খুব সহজেই সনাক্ত করা যায়। এসআরটিএম জরিপের তথ্যানুসারে তাংগিওডংয়ের উচ্চতা ৩,০৬৮ ফুট। উচ্চতার দিক দিয়ে এর অবস্থান নবম। স্বতন্ত্র গঠনশৈলী, ভৌগলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক কারণে বহুল আলোচিত তাংগিওডং। রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপই একে ‘কপিতল’ নামে চিহ্নিত করেছে। মিজোবাহিনী ‘এমএনএফ’ এর একাধিক হাইডআউট এলাকা ছিল কেওকারাডংসহ আশপাশর পাহাড় ও গ্রামগুলো। ধারণা করা হয় ৮০ দশকে তাংগিওডংয়েই ছিল ‘এমএনএফ’-এর অস্থায়ী সদর-দপ্তর। তারা একে ক্যাপিটল বলতো। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের বিবরণেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মিজোদের হাইডআউটের কারণে তাংগিওডংয়ের নাম স্থানীয় মানুষের মাধ্যমে ক্যাপিটল থেকে অপভ্রংশ হয়ে ‘কপিতল’ হয়ে যায়। অনেকে তাংগিওডংকে টেবিল পাহাড় বলেও সম্বোধন করেন।
তাংগিওডংয়ের পূর্ব পার্শ্বটি বেশ খাড়া। এই দিক দিয়ে আরোহণ প্রায় অসম্ভব। ঘন ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা থাকায় অধিকাংশ ভ্রমণ অভিযাত্রীই দূর থেকেই এর সৌন্দর্য অবলোকন করেন। তারপরও দু:সাহসী অনেক অভিযাত্রী তাংগিওডং আরোহণ করেছেন। পর্বতটির পশ্চিম পার্শ্বটি অপেক্ষাকৃত ঢালু এবং বাঁশ, বেত ও বড় বড় গাছের সমন্বয়ে অরণ্যের সৃষ্টি করেছে। এই পার্শ্বটির দক্ষিণ মাঝ বরাবর একটি ক্যাসকেডের মতো আছে। স্যাতস্যাতে হওয়ায় তাংগিওডং জোকের জন্য বিখ্যাত। ২০১৫ সালেও এখানে ‘সূর্য ভাল্লুক’ ও ‘মায়া হরিণের’ দেখা পাওয়া যেতো । অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্থানীয়দের অবাদ শিকারের ফলে আজ হয়তো এদের দেখা পাওয়াই দুষ্কর। তাংগিওডং থেকে বেশ উত্তরে এবং কেওকারাডংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে অসাধারণ একটি ঝর্ণার জন্ম হয়েছে। যার নাম ‘জাদিপাই’। কেওকারাডংয়ের বর্ধিত অংশ হতে নেমে আশা একটি ঝিরি, জংছিয়া ও জাদিপাই ঝিরির সম্মিলিত জল প্রবাহের ফলেই এর জন্ম। জাদিপাই এর জলধারা ‘নাইটং বা নাইট্ট্যাং’ ঝিরি নাম ধরে তাংগিওডংয়ের বেশ কিছুটা নিচ দিয়ে পশ্চিম পাশের অপরাপর ছোট পাহাড়গুলোর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (নাইট্ট্যাং শব্দটি ত্রিপুরা যার মানে পবিত্র)। যা চেমা খালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাঙ্গুতে পতিত হয়েছে। যার ফলে অনুচ্চ পাহাড় আর গিলাছড়ির উঁচু পর্বতের জন্য এখানে সৃষ্টি হয়েছে গহিন বন। আজও এই ঘন অরণ্যের কিয়দংশ বর্তমান রয়েছে। তবে দ্রতই স্থানীয়দের কৃষি ব্যবস্থা ও শিকারের জন্য এবং চোরা শিকারিদের দৌরাত্মের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র। বেশ কয়েক বছর আগে আমার তাংগিওডং অভিযানকালে স্থানীয়দের দ্বারা সংগঠিত শিকারের দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেই দৃশ্যগুলো দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। শিকারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বুঝানোর পরও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির আশানুরূপ কোন পরিবর্তন দেখতে পাইনি। সত্যি বলতে শিকার বন্ধে কঠোর আইন ও নজরদারি ছাড়া তা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়।
লাখুডং (Lakhudaung) :
লাখুডং/লাকখুওডং ভ্রমণকারীদের কাছে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। প্রচলিত যে ট্রেইল ধরে স্থানীয় ও অভিযাত্রী ভ্রমণকারী দল যাতায়াত করেন তা কেওকারাডং হতে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে তাংগিওডংয়ের পূর্ব পাশের পেট ধরে মূল রিজের (গিলাছড়ি) পশ্চিম পাশে চলে আসে। যার ফলে লাখুডং খুব সহজেই দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। তবে লাখুডংয়ের পাদদেশে যাদের বসবাস তারা ঠিকই এখানে কৃষি কাজ (জুম চাষ) করে আসছেন বহু বছর ধরে। লাখুডংয়ের পূর্ব পাশটিও খাড়া এবং এর তিনটি শৃঙ্গ রয়েছে। একে সনাক্তকরার সবচেয়ে সহজ পথ হলো বাকত্লাই পাড়ার পূর্ব দিকে অনুচ্চ পাহাড়টির পরেই এর অবস্থান। গিলাছড়ি রিজের পূর্ব পাশ হতে সহজেই লাখুডং দৃষ্টিগোচর হয়। কেওকারাডং, তাংগিওডং (কপিতল) ও তাজিংডংয়ের জনপ্রিয়তার দরুণ ৩০০০ ফুট উচ্চতার পর্বতটি আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে না। বর্তমানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে এর দক্ষিণ অংশের ভৌগলিক চিত্রে বেশ পরিবর্তন হয়েছে।
লাখুডং অভিযানকালে সামিট পয়েন্ট সনাক্ত করা আমাদের জন্য বেশ কষ্ট সাধ্য ছিল। উভয় পাশ থেকেই খুব সহজেই এতে আরোহণ করা যায়। মূল শৃঙ্গে এখনও বাঁশ ঝাড় রয়েছে। লাখুডং থেকেও পূর্ব ও পশ্চিম পাশের উঁচু পাহাড়গুলোর সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। এসআরটিএম জরিপের তথ্যানুসারে লাখুডংয়ের উচ্চতা ৩০১৮ ফুট। আমরা মুঠোফোনে যে রিডিং পেয়েছিলাম তা ছিল ৯০৪ মিটার অর্থাৎ ২৯৬৬ ফুট। আমরা আশা রাখি ভবিষ্যতে কোন অভিযাত্রী দল লাখুডংয়ের আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। লাখুডংয়ের পশ্চিমে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট পাহাড়ের পরই বাকত্লাই পাড়া। এই পাড়ার উত্তর-পশ্চিম দিকে রয়েছে একটি ঝর্ণা। উচ্চতার বিচারে এটিই হতে পারে উচ্চতম ঝর্ণা। পাড়ার নামের সাথে মিল রেখেই নামকরণ হয়েছে বাকত্লাই ঝর্ণা। ঝর্ণাটি লাখুডং এর উত্তর অংশ হতে সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানত বৃষ্টির জলই এর প্রধান উৎস। শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ থাকে না বললেই চলে। বাকত্লাইয়ের জলধারা গইপ্যাং বা কইপ্যাং ঝিরি নামে নাইট্যাং ঝিরির সাথে মিলিত হয়ে চেমা খালে পড়েছে। ঝর্ণার নিচের অংশটি এক দশক আগেও গহিন অরণ্য সমৃদ্ধ ছিল। এই জায়গাতেই দশ বছর আগে আমি সূর্য ভাল্লুকের একটি শাবকের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম কোন শুক্ল পক্ষের রাতে। সেই স্মৃতি কখনও ভুলার নয়। তখন বর্ষার মাঝামাঝি। ঝর্ণা ও এর আশপাশের জঙ্গলটি ঘুরে আমার সুহৃদ এক বম বন্ধুর কাছে তারই জুমের কচি ভোট্ট খেয়ে যাওয়ার গল্প শুনি এবং চিহ্ন দেখতে পাই। আমি ঝর্ণার কাছাকাছি জুম ঘরে রাত কাটাবো বলে মন স্থির করি। তারপর সেই রাতেই আমরা তিন জন সাক্ষাৎ পাই ভাল্লুক শাবকটির। শাবকটিকে দেখতে পেলেও মা ভাল্লুকটিকে দেখতে পাইনি। মা ভাল্লুকটি হয়তো আশেপাশেই ছিল। উত্তেজনা ও কিছুটা ভয় নিয়ে সেই রাতটি গুটিসুটি দিয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। গল্প শুনেছি, এখানে বড় অজগর সাপও ধরা পরেছে বমদের হাতে। বাকত্লাইয়ের সেই ঘন জঙ্গল এখন আর নেই। গাড়ির রাস্তা হয়েছে সেই সাথে উন্নয়নের নেতি বাচক দিকটিই বেশি প্রভাব ফেলেছে। যদিও আমরা চাই প্রকৃতি ও প্রযুক্তি সমার্থক হউক।
তাজিংডং (Tajingdong) :
তাজিংডংকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মারমা ভাষা হতে পর্বতটির নামকরণ করা হয়েছে তাজিংডং। তাজিংডং শব্দটি অপভ্রংশ। মূল নাম ‘তহজিংডং’ যার মানে যেখানে সূর্যের আলো পর্যন্ত পড়ে না এমন গভীর জঙ্গল (তথ্যসূত্র: বন্ধুবর U She Thowai Marma)। এসআরটিএম জরিপের তথ্যানুসারে তাজিংডংয়ের প্রধান শৃঙ্গের উচ্চতা ২৭৯২ ফুট। পর্বতটির তিনটি শৃঙ্গ/চূড়া রয়েছে। শেষ শৃঙ্গটি পশ্চিম দিকে সরে গিয়েছে। যার ফলে তিনটি চূড়াকে রেখা দ্বারা আবদ্ধ করলে হুক বা বড়শির আকার পাওয়া যায়। তাজিংডংয়ের পাদদেশে এখন বম জনগোষ্ঠীর বাস। তারা প্রথম চূড়াটিকে বলে ‘লেংক্লাই ত্লাং’। এটিই তাজিংডংয়ের প্রধান চূড়া যা গুগল টপোম্যাপ অনুসারে ৮৩৯ মিটারের বেশি হবে না। এটিতে সচরাচর আরোহণ করা হয় না। মূল সামিট থেকে কিছুটা উত্তর দিকে এই চূড়াটি সহজেই চোখে পড়ে। ২য় চূড়াটিকে বলে ‘ফ্লেক ত্লাং’। এটিতেই আমরা আরোহণ করি। ‘ফ্লেক ত্লাং’এর উচ্চতা গুগল টপোম্যাপ অনুসারে ৭৯৯ মিটারের বেশি হবে না। যা প্রায় ২৬২১ ফুট। ৩য় চূড়াটিকে বলে ‘চিংময় ত্লাং’। এসআরটিএম জরিপে এই চূড়াটির উচ্চতা ২৫৮৯ ফুট। গুগল টপোম্যাপ অনুসারে এর উচ্চতা ৭৭৯ মিটারের বেশি নয়। স্থানীয় বম জনগোষ্ঠীর ভাষ্যমতে এই চূড়াটির উপর একটি পাথর রয়েছে যা চূড়াটির সাথে ছোট একটি অংশ দ্বারা যুক্ত। স্থানটি তাদের কাছে পবিত্র।
তাজিংডংয়ের পূর্ব-দক্ষিণ দিকে টেবিল সদৃশ্য ডোতাউং পাহাড়। যার উচ্চতা এসআরটিএম জরিপে ২০৪৭ ফুট। ডোতাউং পাহাড়ই গিলাছড়ি রিজের সমাপ্তি রেখা টেনেছে। তাজিংডংয়ের প্রধান শৃঙ্গটি এক সময় বাঁশ ঝাড় ও জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। বর্তমানে এই চূড়াটি গাছপালা শূন্য পরিপাটি ন্যাড়া অবস্থায় আছে। এখান থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত ত্ল্যাংময় (সাকা হাফং)-এর চমৎকার ভিউ পাওয়া যায়। লাখুডংয়ের বর্ধিত অংশে ছিল পুরনো সিম্পলাম্পি পাড়া। নতুন পাড়াটি কিছুটা দক্ষিণ দিকে সরে গেছে। বাকত্লাই পাড়া ও প্রাতা পাড়ার ঢালে একটি ঝিরির সৃষ্টি হয়েছে যা ‘কাইথন’ ঝিরি। সিম্পলাম্পি পাড়া ও তাজিংডংয়ের মাঝামাঝি অংশে আরও একটি ঝিরির জন্ম হয়েছে। এই ঝিরিটি কাইথন পাড়ার কাছে কাইথন ঝিরির সাথে মিলিত হয়ে ‘পদ্ম ঝিরি’ নাম নিয়ে বর্ডিং পাড়া হয়ে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়েছে। পদ্ম ঝিরি হাব্রু হেডম্যান পাড়া হয়ে তিন্দুর আগে সাঙ্গুতে মিলিত হয়েছে।
তাজিংডংকে বিজয় নামেও ডাকা হয়ে থাকে। তবে আমার মনে হয় পর্বতগুলোর নামকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় নামকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। সরকারিভাবে তাজিংডংয়ের উচ্চতা যা বলা হয় সেটি মস্ত বড় ভুল। উচ্চতার বিচারে তাজিংডংয়ের অবস্থান ২৬তম। উচ্চতা যাই হোক তাজিংডং আরোহণে ভ্রমণকারীদের রোমাঞ্চের অভাব হয় না।
বাংলাদেশে ৭৫টি পর্বতের ভিতর প্রায় ১৪টি পর্বত রয়েছে ৩০০০ ফুট উচ্চতার। আমরা যাকে (Save The Hills & Nature ) সাংকেতিক নাম EMB-14 বলে থাকি। যার মানে ‘এলিট মাউন্টেন অব বাংলাদেশ-১৪’।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন, স্থানীয় ও ভ্রমণকারীদের উদাসিনতায় এই অঞ্চলের পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন। আমরা চাই পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন। তাই বলতে দ্বিধা নেই –
‘পাহাড়ে সব ধরণের শিকার নিষিদ্ধ হউক, গাছকাটা নিষিদ্ধ হউক।’
(লেখাটিতে সন্নিবেশিত অনেক তথ্য লেখকের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ। তাই কোন তথ্যের সাথে দ্বিমত হলে উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে তা এই নিবন্ধে যুক্ত করা হবে এবং তথ্য প্রদানকারীর নাম উল্লেখ করা হবে।)
পাদটিকা : এসআরটিএম তথ্য, উপাত্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান স্যারের গবেষণা হতে নেয়া হয়েছে। স্যারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা রইল।
ছবি : লেখক, খোকা বাবু ও আলি ।
khub e shundor lekha besh tothobohul…….
ধন্যবাদ তাহমিদ ভাই।
অসম্ভব সুন্দর একটি লেখা। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই লেখককে। রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিয়ে,নৈসর্গিক দৃশ্যগুলি কল্পনার স্ক্রিনে ভেসে উঠল। লেখাটা পড়ার পর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে হয়ত দিশেহারা হয়ে যাব আনন্দে। প্রচুর তথ্য পেলাম। সত্যিই এত কিছু জানতাম না। মির্জা রাসেল ও অ্যাব অরিজিনাল বুনোর মতো পরিবেশ প্রেমী ও তাঁদের টিমের সবাই ,সবার অলক্ষ্যে প্রকৃতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।আমাদের সবার উচিত এই উচ্চমানের পত্রিকাটির পাশে থাকা ও পত্রিকার বিকাশে সাহায্য করা।তাহলে আমরা হয়ত প্রজন্মের কাছে নির্মল এক পৃথিবী রেখে যেতে পারব। পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি মানুষকে আমি অন্তর থেকে শুভেচ্ছা , ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাই,এত সুন্দর একটি পত্রিকা উপহার দেওয়ার জন্য।
দাদা আপনার মন্তব্য আমাদের অনেক বড় প্রাপ্তি ও অনুপ্রেরণা।
আমার জানামতে ৩০০০ ফিট এর পাহাড়, ১৪ টির বেশি, লাখুডং একটি অবহেলিত পিক, ৩০০০ ফিট হওয়া সত্বেও অনেক কম অভিযাত্রী যায়।
এসআরটিএম উপাত্ত অনুযায়ী ১৪টি ৩০০০ ফুট উচ্চতার পর্বত সনাক্ত করা গেছে। হয়তো জিপিএস দিয়ে উচ্চতা পরিমাপ করলে এর সংখ্যা কমতে বা বাড়তে পারে। তবে পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপের জন্য এসআরটিএম তথ্যই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। সৈকত হাসান ভাইকে ধন্যবাদ।
Very informative article. Thanks a lot.
ধন্যবাদ।
তথ্যবহুল গুছানো সুন্দর লেখা।
ধন্যবাদ।
খুব তথ্যবহুল একটা লেখা। আপনার কাছ থেকে এমন আরো কিছু বিশ্লেষণভিত্তিক লেখা আশা করছি।
ধন্যবাদ সোহাগ ভাই।
লেখককে ধন্যবাদ সুন্দর অ্যাপ্রোচে তথ্যমূলক প্রতিবেদনটির জন্য। তবে কিছু কিছু ব্যাপার খটকা লেগেছে। সময় সুযোগ হলে দলটির সাথে একটি সামনা সামনি মিটিংয়ের প্রয়োজন অনুভব করছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের।
ধন্যবাদ। আশা রাখি কথা বলে আমরাও সমৃদ্ধ হবো।
লেখাটি অসাধারণ ভাল হয়েছে, ইস কতকিছুই তো দেখা হয়নি এ জীবনে। পাহাড়ি মানুষদের আমরা ভাল থাকতে দেই না, এটা বন্ধ করা উচিত। যে ব্যবসা শুরু হয়েছে সেখানে আজ থেকে ২০ বছর পর হয়ত বান্দরবান হবে বাংলার লাসভেগাস। প্রতিবাদ হবেই আমি না পারলেও সময় ঠিকই পারবে, শুভকামনা।
ধন্যবাদ ভাই।
চমৎকার লেখা। বিস্তারিত ও অনেক নতুন তথ্য জানতে পারলাম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ব্যাবহৃত ১ঃ৫০,০০০ ম্যাপে এসব সামিট গুলোর উচ্চতা লেখা আছে। এছাড়াও ছোট বড় সকল ট্রিগ-হাইট ও পাহার চুড়ার উচ্চতাও দেয়া আছে। ও এই ম্যাপগুলো বেসিক্যালি বৃটিশ আমলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে সার্ভেকৃত তথ্য অনুযায়ী সন্নিবেশিত। পরবর্তী কালে অবশ্য অপডেট করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর বার্মা ক্যাম্পেইনের (১৯৪২-৪৫) সময় মিত্রবাহিনী এই এলাকার ডিটেইল এয়ার রেকি ও সার্ভে করেছিল। ১৯৯০ এর দশকে পার্বত্যচট্টগ্রামে চাকুরিকালীন সময়ে দেখেছি এই ম্যাপগুলো ব্যাবহার করে সঠিকভবে যে কোন যায়গায় চলে যাওয়া যেত এবং প্রদত্ত তথ্য সঠিক পাওয়া যেত। আপনাদের দীর্ঘ লেখটি মনযোগ দিয়ে পড়েছি এবং খুব ভাল লেগেছে। এত সুন্দর ও তথ্য সমৃদ্ধ একটি লেখার লিংক দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন….
শামিম ভাই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনার তথ্যসমৃদ্ধ ও গঠনমূলক মন্তব্য আমাদের সমৃদ্ধ করেছে।