মঙ্গল গ্রহের নামকরণ হয়েছে রোমান পৌরাণিক কাহিনীর সমর দেবতা মার্স এর নামানুসারে। এর আর একটি নাম আছে, যে নামে সারা ব্রহ্মান্ড তাকে চেনে। তা হলো লাল গ্রহ। আজকের বৈঠকটাকে মনের গতির সাথে করে সোজা তুলে নিয়ে যাব সুদূর লাল গ্রহের পৃষ্ঠে। কথা হবে সেখানেই বসে। মনের গতি অথবা স্বপ্ন এমন এক হিম্মত; যার কাছে প্রতিকূলতা গণনার কোন বিষয় নয়। সীমাবদ্ধতার কথা বললে তা তো এক তুড়িতেই সমাধানের মত একটি ব্যপার। আর নয় মাসের সুদীর্ঘ যাত্রা পথ (পৃথিবী থেকে কোন মহাকাশ যানকে মঙ্গলে পৌঁছাতে নয় মাস লাগে), সে তো জোরসে এক লাফ দেয়ার সামিল। যাহোক, তার আগে বলে নেয়া দরকার, সৌরজগতের সর্বোচ্চ পর্বতটির অবস্থান এই মঙ্গলের বুকে। আমরা পর্বতটিকে সামনে বসিয়ে রেখে রীতিমত খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো; ভিনগ্রহের বাসিন্দা হিসেবে কিভাবে সৌরজগতের সর্বোচ্চ পর্বত শীর্ষে পদচিহ্ন এঁকে দেয়া যায়।
তার আগে এই পর্বত সম্বন্ধে একেবারে যতটুকু না জানলেই নয় তা জানার পর্বটা সেরে নেয়া জরুরী। নাম ‘অলিম্পাস মন্স’ (Olympus Mons)। মূলত এটা আগ্নেয়গিরি। লাল গ্রহ মঙ্গল খুব ধূলিঝড় প্রবণ এবং এখানে ধূলিঝড়ের স্থায়িত্ব বেশ দীর্ঘ হয়ে থাকে। পৃথিবীর তুলনায় এখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ৩০% বেশি যার ফলে কখনও কখনও কয়েক কিলোমিটার উচ্চতা দখল করে উড়তে থাকা ধূলিকণাগুলো মাসাধিক কাল পর্যন্ত শূন্যে ভেসে থাকে। জ্যোতির্বিদরা প্রথমে দেখতে পেলেন লাল গ্রহের বুকে একটি গোলাকৃতির দাগ বা স্পট। এরপর দেখা গেল ধূলির পড়ত ভেদ করে উপরে উঠে যাওয়া প্রকান্ড এক পর্বত সদৃশ বস্তু। মূলত বহু দূর থেকে দেখতে পাওয়া মঙ্গল বুকের সেই দাগটিই এই পর্বত। পরবর্তীতে অধিকতর অনুসন্ধান ও গবেষণায় বেরিয়ে আসে তা আসলে আজকের ‘মাউন্ট অলিম্পাস মন্স’। ধূলিঝড় ভেদ করে সুউচ্চ আকাশের পানে উঠে যাওয়া অলিম্পাস মনস এর চূড়াটিই্ এখন পর্যন্ত সৌরজগতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ বলে স্বীকৃত।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় আমাদের সৌরজগতে মাউন্ট অলিম্পাস মন্স এর চেয়েও উঁচু পর্বত আছে। যার নাম ‘রিসিলভিয়া’ (Rheasilvia) এবং এর অবস্থান গ্রহাণু ভিস্তার পৃষ্ঠে। রিসিলভিয়া প্রথমে ১৯৯৭ সালে ‘মহাকাশ টেলিস্কোপ হাবল’ এর ছবিতে আবিস্কৃত হয় কিন্তু ২০১১ সালে ‘মহাকাশযান ডন’ ফিরে আসার আগ পর্যন্ত নামকরণ করা হয়নি। রিসিলভিয়ার উচ্চতা অলিম্পাস মনস এর চেয়ে ৩১৫ মিটার বেশি। আবার কোথাও বলা আছে এর উচ্চতা ২৩ কিলোমিটার। অর্থাৎ অলিম্পাস মনস এর চেয়ে ১.১ কিলোমিটার বেশি। সর্বোপরি তথ্য সীমাবদ্ধতা, সংজ্ঞাগত জটিলতা এবং অন্যান্য কারণে এটার স্বপক্ষে জোড়ালো দাবি এবং প্রমাণ কোনটাই পাওয়া যায় না। তাই এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে, রিসিলভিয়া আদৌ সর্বোচ্চ কি না।
অলিম্পাস মন্স এর সাথে জ্যোতির্বিদদের পরিচয় ১৯ শতক থেকে। যদিও অনেক সূত্রই দাবি করে জ্যেতির্বিদরা অলিম্পাস মন্স এর ব্যপারে ১৯ শতকেরও আগে থেকে বলে আসছে। শুরুর দিকে একে ডাকা হত ‘নিক্স অলিম্পিকা’। ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ অলিম্পিক তুষার। এই ভাষায় মন্স অর্থ পর্বত। পরবর্তীতে নাম হয়ে গেল অলিম্পাস মন্স। অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, গ্রীক ১২ দেবতার নাম থেকে এর নাম এসেছে। মঙ্গলের উপরিভাগ নিয়ে দীর্ঘ অধ্যয়ন ও গবেষণার পর ১৮৭৯ সালে জিওভ্যনি সিয়াপ্যারেলি (Giovanni Schiaparelli) নামে এক ইটালিয়ান জ্যোতির্বিদ প্রথম এর নামকরণ করেন নিক্স অলিম্পিকা।
জ্যোতির্বিদদের কাছে পৃথিবীর প্রতিবেশি এই গ্রহটি গিরিখাত, উপত্যকা আর আগ্নেয়গিরির বাড়ি বলে পরিচিত। এখানে অনেক বড় বড় উপত্যকা আছে। বৃহত্তম যে গিরিখাত আছে তা অ্যারিজোয়ানার দা গ্রেট ক্যানিয়নের চেয়ে বহু গুণ বড় এবং সুবিশাল। আগ্নেয়গিরি বা পর্বতের কথা তো বলাই বহুল্য। এখানে চার বৃহৎ আগ্নেয়গিরি পর্বত আরসিয়া মন্স (Arsis Mons), প্যাভোনিস মন্স (Pavonis Mons), এসেরেয়াস মন্স (Aseraeous) এবং অলিম্পাস মন্স। সম্মিলিতভাবে এদেরকে থারসিস মন্টেজ বলা হয়। এদের মধ্যে অলিম্পাস মন্স উচ্চতার দিক থেকে প্রথম। অলিম্পাস মন্স এর উচ্চতা গড় অভিকর্ষীয় পৃষ্ঠতল থেকে ১ ২১.৯ কিলোমিটার (২১,৯০০ মিটার বা ৭১,৮৫০.৩৯৪ ফুট)। পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বত মাওনা কেয়ার প্রায় দ্বিগুণ এবং সর্বোচ্চ পর্বত এভারস্টের চেয়ে ২.৩ গুণ। এর শীর্ষ দেশের ব্যাসার্ধ ৮০ কিলোমিটার। মাউন্ট অলিম্পাস মন্স মঙ্গলের পশ্চিম গোলার্ধের 18°65’ N এবং 226˚2’ E থারসিসের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। অর্থাৎ এর উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে থারসিসের বাকি এলাকা এবং পূর্ব প্রান্ত অ্যামাজনিক প্লানিতিয়ার মধ্যবর্তী এলাকা। এর নিচের দিকে প্রান্ত দেশের ব্যাসার্ধ ৬২৪ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে তুলনা করতে গিয়ে কেউ একে ইউএস এর অ্যারিজোয়ানা প্রদেশের সাথে, কেউ গোটা ফ্রান্সের সাথে আবার কেউ বা সমগ্র ফিলিপিনস এর সাথে তুলনা করেছে ।
মেরিন-৯ মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছে ১৯৭১ সালে। এটাই মাউন্ট অলিম্পাস মন্স আবিস্কারের সাল বলে গণ্য করা হয়। সৌরজগতের সর্বোচ্চ হলেও এটা একটা ঢালু পর্বত। এর গড় ঢালুর পরিমান মাত্র ৫ ডিগ্রী। খাঁড়া না হওয়ার সুবাদে এটার খুব চমৎকার একটা রূপ আছে । দেখতে সার্কাসের তাঁবুর মত, যেন এক খুঁটিতে দাঁড়ানো। হালকা ঢালু আকারের কারণে মঙ্গল পৃষ্ঠের সমতলে দাঁড়িয়ে কারও পক্ষে পুরো পর্বতটির চিত্র দেখা সম্ভব নয়। এমনকি অনেক দূর থেকেও। একইভাবে একজন সামিটে বা শীর্ষ দেশে দাঁড়িয়েও বুঝতে পারবে না সে আসলে কত উঁচুতে অবস্থান করছে। বিভিন্ন পরিমাপ বলে মঙ্গল গ্রহে অলিম্পাস মন্স এর চেয়েও বৃহৎ আগ্নেয়গিরি আছে। সেক্ষেত্রে প্রথমে চলে আসে ‘আলবা মন্স’ এর নাম। অলিম্পাস মনস এর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত আলবা মন্স এর আয়তন অলিম্পাস মনস এর চেয়ে ১৯ গুণ বড় কিন্তু উচ্চতায় এর এক তৃতীয়াংশ।
অলিম্পাস মন্স এর অসাধারণ আকারের পিছনে সম্ভাব্য কারণ মঙ্গলে চলমান টেকটোনেট প্লেট নেই। যার ফলে মঙ্গল পৃথিবীর মত নয় বরং স্থির হটস্পটের উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং আগ্নেয়গিরি যতক্ষণ না একটি বিশাল উচ্চতায় পৌঁছায় ততক্ষণ উদগিরণ চলতেই থাকে। সোজা কথায় প্লেটের নিশ্চলতা অলিম্পাস মন্স হটস্পটের উপর স্থির করে রেখেছে এবং বারবার আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ একে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে মঙ্গলের আগ্নেয়গিরিগুলোর উচ্চতা বেশি হওয়ার পেছনে আর একটি কারণ হল, এখানকার অপেক্ষাকৃত দুর্বল অভিকর্ষ। অর্থাৎ কোন বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণের ক্ষমতা কম। তাই উচ্চতাও বেশি। উঁচু স্তরের মেঘগুলো প্রায়শই এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং বায়ুবাহিত ধূলিকণাও প্রবাহিত হয়। এর শীর্ষে মঙ্গল পৃষ্ঠের গড় বায়ুমন্ডলীয় চাপের ৭২ প্যাসকেলস ২ (Pascals) বিদ্যমান যেখানে মঙ্গল পৃষ্ঠের গড় চাপ ৬০০ প্যাসকেলস। যদিও মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের গড় চাপ পৃথিবীর ১% এরও কম। এখানে অক্সিজেনের পরিমান পৃথিবীর তুলনায় ২০০ গুণ কম। বিজ্ঞানীরা এখানে হিমবাহের অনেক প্রমাণ পেয়েছে। এ থেকে আরও প্রমাণিত হয় পৃথিবীর উঁচু পর্বতের মত মাউন্ট অলিম্পাস মন্সেও প্রচুর তুষারপাত হত। মঙ্গল পৃষ্ঠ অত্যান্ত ঠান্ডা। এখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ১৪০ থেকে মাইনাস ১২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
২০০৮ সালে এক্সপ্রেস অর্বিটার দ্বারা তোলা ছবিগুলো অলিম্পাস মন্স এর বয়স পরিমাপে যথেষ্ট সহায়তা করে। এছাড়াও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, অলিম্পাস মনস এর বয়স ২ থেকে ১১৫ মিলিয়ন বছর। বিজ্ঞানীগণ ২ মিলিয়ন বছর সময়কালকে ভিত্তি করে বলেছেন, এ সময়টুকু তুলনামূলক সাম্প্রতিক তাই এর তলদেশের ক্রিয়াকলাপ এখনও সক্রিয় থাকতে পারে এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্ফোরণের সম্ভাবনা আছে। সংশ্লীষ্ট অনেকেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, লাখ লাখ বছর সুপ্ত থাকার পরও এটা এখনও সক্রিয় আছে। ওদিকে মঙ্গলের পুরাতন লাভা ফ্লোর বলে দেয় এর বয়স ১১৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছর। উল্লিখিত সময়কালকে সুদীর্ঘ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে অলিম্পস মনস অন্যান্য পর্বতের চেয়ে নবীন। এটা প্রমাণিত যে অলিম্পাস মনস মঙ্গলের কনিষ্ঠতম আগ্নেয়গিরি যদিও এটা গঠিত হতে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর সময় পেরিয়ে গেছে। কিছু বিজ্ঞানীরা মনে করেন মাউন্ট অলিম্পাস মনস এর শেষ বিস্ফোরনটিই ছিল মঙ্গলের শেষ নিঃশ্বাস।
মঙ্গলে মানুষের পায়ের চিহ্ন অঙ্কিত হবে। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চালু হবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের চলাচলের পর্ব! এই স্বপ্ন আজকের নতুন নয় বরং বাস্তবায়নের জন্য চলছে বিস্তর চেষ্টা। দীর্ঘ প্রায় ৭ দশক হয়ে গেল মঙ্গলে আমাদের অভিযান পরিচালিত হয়ে আসছে। এর পিছনের স্বপ্নের ইতিহাস আরও পুরনো। ব্যর্থতা আর সফলতা মিলিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানের ভান্ডারে আজ যুক্ত হয়েছে প্রচুর তথ্য আর জ্ঞান। এখন প্রতীক্ষা রক্ত মাংশের মানুষ প্রেরণের। আশাবাদের কথা সেই দিনটি খুব বেশি দূরে নয়। বিজ্ঞানের প্রভূত অগ্রগতি আমাদেরকে বিশ্বাস করতে শেখাচ্ছে যে, আমরা একদিন মঙ্গলে যাব পর্যবেক্ষক, পর্যটক অথবা পর্বত আরোহী হিসেবে। সেই মোক্ষম দিনটি ঠিক কবে বা কতদিন পর তা হলফ করে বলা অসম্ভব। তবে যে দিনই হোক সেই দিনের বাস্তবতায় আমাদের আজকের আলোচনা হয়তো স্বপ্নের পিছনের চিন্তা হয়ে পড়ে থাকবে।
মঙ্গল পৃষ্ঠের এই বৈঠক থেকে যদি পৃথিবীর দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যায়; তাহলে দেখতে পাবো সেখানকার পর্বত আরোহণের ইতিহাস আমাদেরকে একটি পরিস্কার দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। ৪.৫৪৩ বিলিয়ন বছরের বৃদ্ধ পৃথিবীতে বহুকাল পূর্বে প্রাকৃতিক ক্রিয়াকলাপের ফল স্বরূপ হিমালয় পর্বতমালার জন্ম। আজকের বাস্তবতায় পৌঁছতে তাকে প্রায় ৪ কোটি বছরের এক সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। অথচ সেদিনের কথা, ১৯৫৪ সালে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শিখরে মানুষের পদচিহ্ন পরেছে। সে হিসেবে মাউন্ট অলিম্পাস মনস শীর্ষ আরোহণের জন্য যদি আরও কয়েক শতাব্দী প্রতীক্ষা করতে হয়; তা বেশি কিছু নয়। এই প্রতীক্ষার কাল এক টুকরো সংক্ষিপ্ত সময়ের মাঝ দিয়ে দেখতে দেখতেই পেরিয়ে যাবে। তবুও আমরা মাউন্ট অলিম্পাস মন্স জয়ের স্বপ্ন দেখবো, ইচ্ছা পোষণ করবো। কারণ মানব সভ্যতা এমনকি মহাবিশ্বের ইতিহাসে দুই-এক শতাব্দী খুব বেশি সময় নয়।
টিকা :(১) যেহেতু মঙ্গলে জলরাশি পূর্ণ কোন মহাসাগর বা এই জাতীয় কোন জলাশয় নেই তাই সেখানকার বিভিন্ন উচ্চতা নির্ণয়ের জন্য একটি শূন্য উচ্চতার পৃষ্ঠতল ধরে নেয়া হয়েছে। একে বলা হয়েছে গড় অভিকর্ষীয় পৃষ্ঠতল।
(২) প্রতি বর্গমিটারে এক নিউটন।
তথ্যসূত্র ও ছবি:
1, Olympus Mons is How Tall?! : Ryan Anderson
2, Highest and Lowest Point on Mars: Horbart M. King
3, Simulating the evolution of Mars volcano Olympus Mons : Science Daily
4, Extreme Surface Features of Mars: Olympus Mons, Tallest Volcano in the Solar System: Dani Johnson
5, Olympus Mons: Giant Mountain of Mars: Nola Tylor Redd
6, Olympus Mons: Facts & Height, General Studies Earth & Space Science: Help & Review/Science Course
7, Advancing Earth and Space Science
8, Nasa’s Mars Exploration Program
9, Olympus Mons- The caldera in close up ESA Science & Exploration
10, Recent Activity on Mars: Fire and Ice: Linda M. V. Martel