বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে বান্দরবানে বুনো একটি ঝর্ণার খোঁজে বেরিয়ে পড়ি। পাহাড়ে প্রচন্ড বৃষ্টি আর হড়কাবানে ফুলে-ফেঁপে উঠা তৈন খালের ভয়াবহ রূপ দেখে ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। বর্ষায় পাহাড়ি কোন নদী কিংবা খালের এমন ভয়াঙ্কর রূপ আমি আগে কখনো দেখিনি। শীতের সেই শান্ত বহতা তৈন খাল বর্ষার যৌবনে এতোটা আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। সে যাত্রায় প্রতিকূলতার সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে অতৃপ্ত মনে ফিরে আসলেও বর্ষায় সেই মোহনীয় বুনো ঝর্ণার সিম্ফোনি নিরবে কান পেতে শুনার আকাঙ্খা আরও তীব্র হয়েছিলো। অল্প কিছুদিন পরে ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে আবারও বেরিয়ে পড়ি পাহাড়ের আঁড়ালে লুকিয়া থাকা কৌতূহলী সেই সৌন্দর্যের খোঁজে। এ যাত্রায় আমার সঙ্গী বয়সে তরুণ কয়েকজন অনুজ। তবে ওদের ইচ্ছা শক্তি ছিলো প্রবল।
নৌকা থেকে নেমে দুছড়ি বাজারে গিয়ে উঠি। কয়েকদিন আগে হরকাবানে ভেসে গেছে বাজারের সব দোকানপাট। খরস্রোতা তৈনের তান্ডবলীলা তখনও পুরোপুরি কমেনি। এর মধ্যেই সংগ্রামী মানুষগুলি বেঁচে থাকার তাগিদে আবার নতুন করে বাজার পুনঃর্নির্মাণের চেষ্টা করছে। পরিচিত কয়েকজনের সাথে কুশলাদি বিনিময় শেষে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আমরা তৈনের পাড় ধরে রওনা হই। তবে অবিরাম বৃষ্টি আর জোঁকের উৎপাতের কারণে হাঁটার গতি বেশ মন্থর হয়ে পড়ে। যদিও আমাদের সুনির্দিষ্ট কোন গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্য নেই। যুৎসই কোন জুমঘরে রাতটি কাটিয়ে দেওয়ার প্ল্যান। বর্ষায় চারিদিকে সবুজের সমারোহ। তবে পাহাড়ে চোখ ঝলসানো সেই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বেশ কষ্টও সহ্য করতে হয়। বর্ষায় পথের দুর্গমতা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন।
তীব্র স্রোতে খালের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে বার বার রোপ ফিক্সড করে পাড় হতে গিয়ে আমরা সবাই বেশ ক্লান্ত । এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে অন্ধকার নেমেছে, টর্চ আর হেড ল্যাম্পের আলোয় পথ চলতে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। একে তো অচেনা পথ, তার ওপর রাতে পাহাড়ে পথ ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এখন জুমের মৌসুম তাই সামনে কোন জুমঘর পেলে রাতটি ওখানেই কাটিয়ে দেয়ার আশায় ক্লান্ত শরীরে পথ চলছি। রাত প্রায় ১০টা বেজে গেছে তখনও আমরা কোন জুম ঘরের সন্ধান পাইনি। এমন অনিশ্চয়তায় নিয়ে ঝিরিতে নামতেই আমরা চমৎকার একটি জলোপ্রপাতের উপরে এসে পড়ি। পাহাড়ের ভৌগলিক অবস্থা ও পরিবেশ দুটোই বেশ বৈচিত্র্যময়! কিছুক্ষণ আগের পাংশুটে মেঘ সরে গিয়ে হঠাৎ করেই শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ পাহাড়কে স্বপ্নীল এক আলোতে রাঙিয়ে তুলেছে। মোহনীয় সেই চাঁদের আলোয় জলপ্রপাতের স্বর্গীয় সৌন্দর্যে সবাই বিমোহিত হয়ে পড়ি। টীমের সবাই ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত থাকায় এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নেই। খোকাবাবুর ব্যাকপ্যাক থেকে কিছু শুকনো খাবার বের করে সবাইকে দিচ্ছিলো আমি তখন পেনিস্টোভ কফি বানানোর আয়োজন শুরু করি। দলের সদস্যরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ না পেয়ে কিছুটা চিন্তিত হলেও এমন পরিবেশে কফির আয়োজন দেখে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি ট্রেইল কিংবা ঝিরির পাশে বসে কফি বানাতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে। এটি ক্লান্তি দূর করার একটি কৌশলও বটে।
কফি পর্ব শেষ, এবার আমাদের উঠতে হবে। কিন্তু যাবো কোথায়? প্রকান্ড সব পাথরখন্ড ঝিরিটিকে আড়াল করে রেখেছে। রাতের অন্ধকারে এমন দুর্গম পথ অতিক্রম করা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়া বোকামী হবে। ঝিরির ডান দিক দিয়ে উপরে উঠে যাওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই। তাই সেদিক দিয়েই আবার পাহাড়ে উঠতে থাকি। এক্ষেত্রে ভাগ্য আমাদের সহায় হয়। মিনিটি বিশেক উপরে উঠেই আমরা একটা জুমের দেখা পাই। যেহেতু নতুন জুম নিশ্চয়ই কোন জুমঘরও রয়েছে। কিছুক্ষণ উপরে উঠার পরেই কাক্ষিত জুমঘরের দেখা পেয়ে দলের সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। জুমঘরটির কাছে পৌঁছে মৃদুস্বরে কয়েকবার ডাকতেই ঘরের ভিতর থেকে মাঝ বয়েসী এক যুবক বেরিয়ে এলেন। ভদ্রলোক তেমন বাংলা না বুঝলেও আজ রাতটুকু এখানে আশ্রয় চাই বুঝতে পেরে কিছুটা শঙ্কিত মনেই আমাদের থাকার অনুমতি দিলেন।
সারাদিনের ধকলে সবাই ভীষণ ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত। তাই কর্দমাক্ত ভেজা পোষাক পাল্টে ব্যাগপ্যাকে থাকা রসদ বের করে রান্নার তোড়জোড় শুরু করি। ততক্ষণে জুমের মালিকের সাথে আমাদের পরিচয় পর্ব শেষ হয়েছে। দাদার নাম সৈলেন তংচঙ্গা, সাইংপ্রা পাড়ার বাসিন্দা উনি। গত বছর বিয়ে করেছেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী জুমের পরিচর্যা ও ফসল তোলার জন্য আগামী কয়েক মাস এই জুম ঘরটিতেই বসবাস করবেন। তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সাথে কুকুর, বিড়াল আর পোষা মুরগিও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। তাই জুমঘরটি এখন তাদের বিকল্প বাড়ি। উনুনে কাঠখড়ি গুজে দিয়ে জুমের মালিকের সাথে সবাই আড্ডায় মেতে উঠি। সে রাতে খাবার পর্ব শেষ করে পরের দিনের প্ল্যান নিয়ে একটু আলোচনা করে যে যার মতো ঘুমে এলিয়ে পড়ি।
পরের দিন ভোর! বাকিরা তখনও ঘুমের রাজ্যেই রয়েছে। আজকের অনিশ্চিত পথের চ্যালেঞ্জ আর অভিযানের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে চিন্তায় গত রাতে ভালো ঘুম হয়নি। আলসেমি ভেঙ্গে জুমঘরের বাহিরে এসে দেখি- চারপাশে পাহাড়ঘেরা সবুজ অরণ্য! এ যেন দুর্গম পাহাড় রাজ্যে একট টুকরো স্বর্গের প্রতিচ্ছবি। জুমঘরটির চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। জুম ঘরের অনেক নীচে সর্পিল একটি ঝিরি বয়ে গেছে নিজস্ব কলতানে। সৃষ্টিকর্তা যেন এখানে প্রকৃতি আর পাহাড়ি জীবনযাত্রার মিশেলে অপরূপ এক ল্যান্ডস্কেপের নকশা করেছেন। প্রকৃতি আপন খেয়ালে নিজস্ব একটি জগত গড়ে তুলেছে। এখানে যান্ত্রিকতার কোন ছোঁয়া নেই, কোলাহল নেই, রয়েছে কেবল প্রকৃতির নিজস্ব সিম্ফোনী। জীবন এখানে অনেক সরল, অনেক অর্থবহ আর প্রাঞ্জল। এবার গল্পে ফিরি-
এখান থেকে সাইংপ্রা ঝর্ণার দূরত্ব মাত্র একদিনের। আমরা সিদ্ধান্ত নেই অভিযান শেষে আবার এই জুম ঘরেই ফিরবো। প্রয়োজনীয় গেজেট গিয়ার, ম্যাপ আর আলোচনালব্ধ জ্ঞান পুঁজি করে বেরিয়ে পড়ি লুকিয়ে থাকা সেই ঝর্ণার খোঁজে। অনেক চড়াই-উৎরাই করে দুপুর নাগাদ আমরা একটি ঝিরির পতনমুখে পৌঁছাই। ঝিরিটি কীর্সতং পাহাড়ের দক্ষিণ দিক থেকে এসে এখানে বড় একটি জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা এটাকেই সাইংপ্রা নামে ডাকে। চারদিকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারি ঝর্ণাটিকে সামনে থেকে দেখতে হলে একেবারে নীচে নেমে যেতে হবে। তবে এখানে পাহাড় একেবারে খাড়া দেয়ালের মতো হওয়ায় নিচে নামার উপায় নেই। পাহাড়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা থকে শিখেছি যেখানে কোন পথ নেই সেখানেই অনেক নতুন পথ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। ঝিরি ছেড়ে ডানদিকে আরও কিছুটা পথ অতিক্রম করে তুলনামূলক একটু কম ঢাল বেয়ে নীচে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। যদিও এরকম সিদ্ধান্ত অনেক সময় আত্মঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অবশ্য এছাড়া আমাদের বিকল্প কোন উপায়ও ছিলো না। এমন দুর্গম পথে নামতে গিয়ে পাহাড়ের ঢালে কখনও ঝুরঝুরে পাথরে পা হড়কে যাওয়া, কাটাজাতীয় গাছের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতে হতে আমরা যখন ঝর্ণার একেবারে ডাউনস্ট্রীম সাংইপ্রা ঝিরিতে নেমে আসি ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা নামছে। এ ধরনের গিরিখাতে সাধারণত ঝুপ করেই অন্ধকার নেমে আসে। মাথার উপর একজোড়া রাজধনেশের ডানা ঝাপটে নীড়ে ফিরে যাওয়ার শব্দ যেন সন্ধ্যার আগমনী বার্তা দিয়ে গেল। দুই পাশে খাড়া দেয়ালের মতো পাহাড় উঠে যাওয়ায় অন্ধকারটা যেন আরও বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। দ্রুত অন্ধকার নেমে যাচ্ছে অরণ্যে।
এমন পরিস্থিতিতে কি করণীয় ভেবে সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে এতো কাছে এসে ফিরে যাওয়া যে একদম ঠিক হবে না, সে বিষয়ে সবাই সম্মত হলাম। তাই কষ্ট করে রাতটি বনেই কাটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এদিকে এমন গহীন জঙ্গলে রাত কাটানোর কোন রকম পূর্ব প্রস্তুতি আমাদের নেই। উপর থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহ সাংইপ্রার বিশালাকার বোল্ডারে ধাক্কা লেগে একটা অদ্ভুত শব্দ সৃষ্টি করছে। আশেপাশে খোঁজাখুজি করে প্রায় সমতল বড় একটি বোল্ডার পেয়ে আজকের রাতটি ওটার উপরে কোনরকমে কাটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
টীমে মোট ছয়জন সদস্য অথচ রাতের খাবার বলতে শুধু কফি আর দুই প্যাকেট নুডুলস আমাদের সম্বল। সাথে করে নিয়ে আসা শুকনো খাবার পথেই ফুরিয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছিলাম কফির এতো সরঞ্জাম না এনে আরও কিছু শুকনো খাবার নিয়ে আসলে আজকে রাতে কাজে দিতো। টিমের এসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলোতে সবাই কমবেশি আমার ওপরেই নির্ভর করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিযানে এখনো অনিশ্চয়তার একটি রাত ও দিন পড়ে রয়েছে। কালকে দিনে খাবারের কথা ভেবে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লেও আপততঃ আজকে রাতে সার্ভাইব করার জন্য আগুন জ্বালানোর কাঠখড়ি জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। জনমানবহীন গহীন এক অরণ্য, এখানে নিশাচর হিংস্র প্রাণীর আনাগোনা অহরহ। তাই রাতে বোল্ডারের পাশে আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো বর্ষাকালে বনের অধিকাংশ লাকড়ি ভেজা আর স্যাঁতস্যাতে হওয়ায় আগুন জ্বালানো বেশ দূরুহ কাজ। অনেক চেষ্টা করে রান্না করার জন্য নিয়ে আসা ফুয়েলের সাহায্যে আগুনের কুন্ডলী তৈরি করে সবাই আগুনের চারপাশে বসে পড়ি। আগুন জ্বালানোর পরপরই বন্যপ্রাণী আর অজানা অন্ধকারের ভয় অনেকাংশেই কেটে গিয়েছে। আপাততঃ সবাই আগুনের পাশে গোল হয়ে বসে আছে।কিন্তু সারারাত তো আর এভাবে কর্মহীন বসে থাকা যায় না। ঝিরিতে নেমেই খেয়াল করেছি এখানে অনেক কাঁকড়া রয়েছে। কিছুক্ষণের চেষ্টায় অনেকগুলি কাঁকড়া ধরে ফেলি। আজকে রাতে ঝলসানো কাঁকড়া আর ধোঁয়া ওঠা কফি একেবারে মন্দ হবেনা। আগুনের একপাশে কফির পানি বসিয়েছি অন্যপাশে কাঁকড়া পোড়াচ্ছি। ক্ষুধা আর ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে প্রাণবন্ত একটা আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। অথচ আগুন জ্বালানোর আগে এটা কারও কল্পনাতেও ছিল না। সবগুলো কাঁকড়া পোড়ানো শেষে একটি প্রস্থর খন্ডের উপর রাখা হলো। এ যেন প্রাকৃতিক ডাইনিং টেবিলের উপর কাঁকড়ার কাটলেট পরিবেশনা। ওদিকে কফিও প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে, বাঁশ কেটে মগ বানিয়ে তাতে পরিবেশন করা হয়েছে। মনে পরে মধ্যরাতে তাঁরার ভারে নুয়ে পড়া আকাশের নিচে বসে একদল অরণ্যচারী পোড়া কফির তেতো স্বাদ আস্বাদন আর কাঁকড়া খেতে খেতে পরের দিনের পরিকল্পনাটা যখন ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম তখন দূরের পাহাড় থেকে প্রতিধ্বনি হয়ে ভেসে আসছিলো গহীন অরণ্যের বিভিন্ন নিশাচর হিংস্র প্রাণীর আওয়াজ।
ভোরের আলো ফোটার আগেই আপস্ট্রীমে উঠা শুরু করি। ঝিরি ধরে উপরে উঠতে থাকলে একসময় আমরা ঝর্ণার একেবারে কাছে পৌঁছাতে পারবো। কিছুক্ষণ উঠার পরেই আমরা মাঝারি আকারের চমৎকার একটি ঝর্ণা দেখতে পেলাম। এটি আসলে মাইটি সাইংপ্রারই একটি স্টেপ। এখান থেকে শেওলা ধরা পিচ্ছিল পাথুরে একটি খাড়া দেয়ালের মতো জায়গা হাঁচড়ে পাঁছড়ে উঠে আবার ঝিরির পানিপ্রবাহ লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে যেতে ঝর্ণার আরও একটি স্টেপ দেখতে পাই। এভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপরে উঠতে উঠতে অবশেষে সেই সৌন্দর্যের রাণীর সামনে গিয়ে হাজির হই। এটাই সেই সাইংপ্রা ঝর্ণার প্রথম ধাপ। ঝর্ণার জলপতনের প্রচন্ড শব্দে কিছুই শোনা যাচ্ছে না। পানির প্রবাহ আর বাতাসের তীব্রতা বেশি থাকায় পাথরে আছড়ে পরে জলকনা পুরো পাহাড়টিকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। অবাক বিষ্ময় আর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে অজান্তেই আনমনা হয়ে যাই। আগেরবার পাহাড় শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিলেও এবার আমাকে ঠিকই কাছে টেনে নিয়েছিলো।
এই অভিযানটি আমার জীবনে এক ভাবনার জন্ম দিয়েছে। মনের গভীরে এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, কংক্রিটের প্রাণহীন নগরে নিদ্রাহীনতায় কল্পরাজ্যে আজও আমি কান পেতে শুনতে পাই অরণ্যে নিশাচরের আর্তচিৎকার। সেই রাতে ঝলসানো কাঁকড়া, পোড়া কফির তেতো স্বাদ আর বনের আদিমতা গভীর বোধের সৃষ্টি করেছে। সেই বোধ আমাকে করেছে অরণ্যচারী। যে অরণ্যে আমি আগুন্তুক নই, বরং অরণ্যচারী হয়েই যেন আজন্ম বেঁচে আছি।
অভিযাত্রী: বুনো, খোকা, হাসিব, অভি, মেমী, সোহেল।
ছবি: লেখক । (ছবির অ্যালবামের জন্য STHN এর ফেইস পেইজ ভিজিট করুন)
সাইংপ্রা পাড়া কোথায়? আপনার এই আর্টিকেল টি পড়ে কয়েকটা প্রশ্ন জাগল। আমি পাহারে গিয়েছি একবার তাও ক্রিসতং রুংরাং ট্রেক এ। ওদিকে সাইংপ্রা পাড়ার নাম শুনিনাই। আপনারা দুসরি বাজার থেকে শুরু করেছেন সেখান থেকে সাইংপ্রা গিয়েছেন একেবারে আননোন রাস্তা ধরে? মানে সাইংপ্রা র চারপাশে তোহ কয়েকটা রুট আছে মেনিয়াং পাড়া, ক্ষেমচং পাড়া হয়ে অথবা থানকোয়াইনের পথ ধরে হাজীরাম পারা হয়ে তারপর তং এ পাড়া দিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু আপনার বর্ণনার মাধ্যমে আমি কোন রুটই রিলেট করতে পারি নাই। যদি আপনারা একেবারে অচেনা রাস্তা ধরে যান সেক্ষেত্রে সেটা নতুন একটা ট্রেইল হবে।
আর প্রথম যে ঝর্নার পাশে কফি খাইছিলেন ওইটা কোন ঝর্না ওটার বর্ণনা শুনে লোভ লাগছে ইনশাআল্লাহ যাব।