Save The Hills & Nature
  • নীড়
  • পরিচিতি
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু
    • দূষণ
    • দুর্যোগ
  • পর্বতকথা
    • বাংলাদেশ
    • বিশ্ব
    • হিমালয়
    • পর্বতারোহণ
  • বিভাগ
    • জীববৈচিত্র
    • বনাঞ্চল
    • নদী ও জীবন
    • ভ্রমণ
    • জীবন ও সংস্কৃতি
  • কার্যক্রম
    • প্রকৃতি পাঠ
    • প্রতিবেদন
    • গবেষণা ও প্রবন্ধ
  • ছবিঘর
  • যোগাযোগ
Save The Hills & Nature
  • নীড়
  • পরিচিতি
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু
    • দূষণ
    • দুর্যোগ
  • পর্বতকথা
    • বাংলাদেশ
    • বিশ্ব
    • হিমালয়
    • পর্বতারোহণ
  • বিভাগ
    • জীববৈচিত্র
    • বনাঞ্চল
    • নদী ও জীবন
    • ভ্রমণ
    • জীবন ও সংস্কৃতি
  • কার্যক্রম
    • প্রকৃতি পাঠ
    • প্রতিবেদন
    • গবেষণা ও প্রবন্ধ
  • ছবিঘর
  • যোগাযোগ
Save The Hills & Nature
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখতে চাই

পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র ধ্বংসের দায় সকলের

ফেরদৌস রলিন লিখেছেন ফেরদৌস রলিন
জানুয়ারী ১৯, ২০২০
বিভাগ দূষণ
2
পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র ধ্বংসের দায় সকলের

চলতি শতাব্দীর প্রারম্ভ বা তার কিছুকাল আগ থেকে এ দেশে একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়, যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বিক্ষিপ্ত আকারে হলেও বর্তমানে একটি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক এই প্রবণতাটি ক্রমেই সঞ্চারিত হয়ে চলেছে তরুণ সমাজের এক বিশেষ অংশের মাঝে। অনিশ্চিয়তার এই সমাজ ব্যবস্থায় যখন অসংখ্য মানুষ দিকভ্রান্ত ও হতাশ হয়ে স্বজ্ঞানে বা পারিপার্শিকতার প্রভাবে নিজেদেরকে চালিত করছে বিপথে। সেই পরিস্থিতিতে হাতে গোনা কিছু তরুণ-যুবক দু-চারটি করে টাকা জমিয়ে সময় সুযোগ বুঝে সেই প্রবণতায় পা বাড়ায় প্রকৃতির টানে। সেক্ষেত্রে প্রকৃতির অকৃত্রিম পরশ নিতে, বাস্তবতাকে অনুভব ও উপভোগ করতে এবং চোখ দুটোকে পরম সৌন্দর্যে মুগ্ধ করতে প্রাধান্য পেয়ে থাকে পাহাড়ি অঞ্চল। পাহাড়ি অঞ্চল বলতে সিলেট বিভাগের কিছু এলাকা তারপরই চলে আসে পার্বত্য চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাহাড়গুলো অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন তথা সরকারি-বেসরকারি অপরিনামদর্শী সব পরিকল্পনা ও অবহেলার দরুন টিকতে না পারার যুদ্ধে আগেই হার মেনে সম্ভাব্য করুণ পরিনতির প্রতীক্ষায় রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের সীমান্তবর্তী পাহাড়ী অঞ্চলগুলো এই পরিনতি অনেক আগেই বরণ করেছে। যাকে ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষেই পাহাড় পর্বত দেখার জন্য যারা বারবার ছুটে যায় বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। তাদের বেদনার কথা অনুধাবন করা যায় সহজেই। কোথায় হালফ্যাশন জামা কাপড়ের চিন্তা করবে অথবা দু’চারদিন পরপরই তথাকথিত ভিনদেশী সংস্কৃতির খাবারের দোকানে বন্ধুবান্ধব নিয়ে হৈ হুল্লোড় তা নয়, সেখানে এসে বাঁধ সাধে প্রকৃতি প্রেম, নতুন করে দেখার স্বাধ এবং আবিস্কারের দুর্নিবার স্বপ্ন। একে বোধহয় বেদনা বললে ভুলই হয়ে যায়। কারণ এই বেদনার গভীরে লুকিয়ে থাকে অর্জনের স্পৃহা এবং অনুভবের পরম সুখ। হলফ করে বলা যেতে পারে এই মানুষগুলো নির্মল প্রকৃতির অনিষ্ট দূরের কথা গাছের সামান্য একটি পাতা ছেড়ার কথাও ভাবতে পারেন না। বাস্তবতা হলো আমাদের চোখের সামনে ক্রমেই ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে এক সময়ের জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। ধ্বংসলীলায় যুক্ত নানাবিধ প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম প্রধান হিসেবে অবির্ভূত হয়েছে তামাক চাষ। আমরা জানি, তামাক কোন খাদ্য ফসল নয় এবং কৃষি ফসলের পর্যায়েও পরে না। এমনকি প্রয়োজনীয় কোন শিল্পের কাঁচামালও নয়। এর চাষ করা হয়ে থাকে শুধু পাতা উৎপাদনের জন্য। নিকোটিন নামক বিশেষ উপাদান সমৃদ্ধ বলেই তা প্রকৃতির অন্যান্য পাতা হতে ভিন্ন এবং আলাদা মূল্য ধারণ করে থাকে। যা থেকে প্রধানত তৈরি হয় বিভিন্ন মানের ও ব্র্যান্ডের সিগারেট এবং বিড়ি। এছাড়াও জর্দা ও গুল তৈরির অন্যতম প্রধান উপকরণ এই তামাক পাতা।

বিংশ শতাব্দীতে তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে পৃথিবীতে মৃতের সংখ্যা প্রায় ১০০ মিলিয়ন, যা কিনা দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধে নিহত মানুষের সমুদয় সংখ্যার চেয়েও অধিক। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসেব মতে তামাকজাত পণ্য সেবনের দরুণ চলতি শতাব্দীতে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে ১০০০ মিলিয়ন বা ১শ কোটিতে। উল্লিখিত হিসেবটি শুধু তামাকজাত পণ্য সেবনজনিত প্রভাব থেকে। এছাড়াও তামাক চাষের ক্ষতি আরও বিস্তৃত ও ভয়াবহ। তামাক উৎপাদনে বাংলাদেশ নতুন নয়, বরং আগে থেকেই হয়ে আসছে। পার্থক্য হল, সে সময় এর পেছনে বাণিজ্যিক কোন উদ্দেশ্যে ছিল না, তা হত কেবল পানের সাথে খাওয়া এবং হুকা বা বিড়ির জন্য।

ভয়াবহতার দিকটি বিবেচনায় বিশ্বের ধনী দেশগুলিতে তামাক চাষ প্রায় নিষিদ্ধ। চাহিদার যোগান নিশ্চিত করণে কাঙ্খিত পরিমাণ তামাক চাষের ক্ষেত্র হিসেবে তারা বেছে নেয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে। এই পরিস্থিতিতে ১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) কোম্পানি বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) এর রংপুর এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে তামাক চাষ শুরু করে। সফল পরীক্ষার পর ১৯৭১ পরবর্তীতে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ব্যাপকভাবে তামাক চাষ শুরু হয়। দুই থেকে তিনটি জাতের তামাক যেমন -ফ্লু কিউড ভার্জিনিয়া, মতিহারী ও বার্লী সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। এর মধ্যে ফ্লু কিউড ভার্জিনিয়া জাতের তামাক অধিক হয়ে থাকে, যা কোম্পানিগুলোকে আগে বিদেশ থেকে আমদানী করতে হত। বর্তমানে আর আমদানীর প্রয়োজন পড়ে না।

বৃহত্তর রংপুরের প্রায় সব জেলার পাশাপাশি তামাক চাষ ছড়িয়ে পড়েছে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, নাটোরের চলনবিল এলাকা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার এমনকি পার্বত্য জেলাগুলিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১,০৮,০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তার আগের অর্থবছর (২০১২-১৩) -এ এর পরিমান ছিল ৭০ হাজার হেক্টর। অর্থাৎ এক বছরেই বেড়ে যায় ৩৮ হাজার হেক্টর। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মতে ২০০৯-১০ অর্থবছরে তামাক রপ্তানি করে জাতীয় আয়ের খাতায় যুক্ত হয়েছিল ৫ কোটি মার্কিন ডলার। তার আগের অর্থবছরে একই পরিমান জমিতে উৎপাদিত কৃষি পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৯ কোটি ডলার। সুতরাং রপ্তানি পণ্য হিসেবে তামাককে বোধহয় অধিক অর্থকরী বলার সুযোগও থাকে না।

শুরুটা বৃহত্তর রংপুরে হলেও তামাক চাষ ক্রমেই পদ্মা নদীর উর্বর কুষ্টিয়ার চরাঞ্চল ও চলনবিল এলাকার দিকে ধাবিত হতে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে সমতলের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রবেশ করে কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলে। এলাকা পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে জমির উর্বরা শক্তির হ্রাস এবং দ্বিতীয় কারণটি হল বৃক্ষ স্বল্পতা। বৃক্ষের অবাধ যোগানের সুবিধার্থে এ পর্যায়ের আক্রমণ পার্বত্য এলাকায়। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, দেশের বৃক্ষ নিধনের ৩০ শতাংশই ঘটছে তামাক পাতা শুকানো বা প্রক্রিয়াকরণের কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের কারণে (‘তোন্দুল’ নামে বিশেষ ধরনের চুল্লিতে তাপ দেয়ার মাধ্যমে পাতা শুকানো হয়ে থাকে)। কুষ্টিয়া এলাকায় জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হওয়া ও জ্বালানি কাঠের অপর্যাপ্ততার কারণে বান্দরবানে সর্বপ্রথম তামাক চাষ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। কক্সবাজার-বান্দরবান জেলায় ১৯৯৮ সালে তামাক চাষ হয় মাত্র ৭৪০ একর জমিতে। ২০০৫-০৬ সালের দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪,৭৫০ একরে। ২০১৪-১৫ সালে শুধু কক্সবাজারের চকোরিয়াতেই তামাক চাষ হয় ৮,৭৫০ একর জমিতে। চকোরিয়ার ঠিক লাগোয়া বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় একই মৌসুমে চাষ হয় ১০,২০০ একর জমিতে। বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে গত দশ বছরে সেখানে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মোতাবেক শুধু বান্দরবানেই তামাক চাষ হয়েছে ২,৭৩৯ হেক্টর জমিতে। খাগড়াছড়ি কৃষি সস্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যান মতে গত মৌসুমে তামাক চাষ হয়েছে ৮০৪ হেক্টর জমিতে এবং রাঙ্গামাটিতে হয়েছে ২৫০ হেক্টর জমিতে।

স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলির মতে প্রকৃতপক্ষে, সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, প্রতি বছর পার্বত্য জেলাগুলিতে উৎপাদিত তামাকের মোট পরিমান দাঁড়ায় ১০ লক্ষ ৫০ হাজার বেল (এক বেল সমান ৪০ কেজি)। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কৃষক প্রতি হেক্টর জমিতে সাধারণত ৭০ বেল পরিমাণ তামাক পাতা উৎপাদন করে থাকেন। সে হিসেবে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার বেল তামাক উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৫ হাজার হেক্টর জমির প্রয়োজন।

প্রক্রিয়াকরণের অন্যতম ধাপ হল পুড়িয়ে শুকানো। প্রক্রিয়াকরণের এই পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে পরিচিত তোন্দুল নামের চুল্লিতে প্রতি ৭০ বেল তামাক পোড়ানোর জন্য প্রায় চার টন জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন পড়ে যার অর্থ দাঁড়ায়; প্রতি বছর ১০ লক্ষ ৫০ হাজার বেল তামাক প্রক্রিয়াকরণে পুড়ে ফেলা হচ্ছে ৬০ হাজার টন জ্বালানি কাঠ। ’পাথ কানাডা’ নামক এক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বাংলাদেশে বন উজাড়ের এক তৃতীয়াংশের পেছনে একমাত্র তামাক চাষকেই দায়ী করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে তামাক চাষের কারণে বনভূমি ধ্বংসের বার্ষিক হারে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান তৃতীয়।

জানা যায় কক্সবাজারের চকোরিয়াতেই রয়েছে ২ হাজার তোন্দল। বান্দরবান ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য পাহাড়গুলিতে পুরনো বৃক্ষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। বিশেষ করে বনজ, ফলজ ও ওষধি গাছ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, অপরিকল্পিত জুম চাষের কারণে গভীর পার্বত্য অঞ্চল ইতিমধ্যেই বৃক্ষ শুন্য হয়ে গেছে। যার পেছনে স্থানীয়দের অসচেতনতা এবং রাষ্ট্রের ’জাতি প্রশ্নে’ সমাধানে অনাগ্রহ বা অপারগতা ও পার্বত্য অঞ্চল বিষয়ক নীতিই প্রধানত দায়ী। যাহোক সে অন্য প্রসঙ্গ। এই পরিস্থিতিতে অবশ্য ‘বিএটি’ নিজেদেরকে হিতাকাঙ্খী ও পরিবেশবান্ধব প্রমাণ করতে গিয়ে এখানকার পরিবেশ অনুপযোগী দ্রুত বর্ধণশীল একশিরা, ইউক্যালিপ্টাসের মত বৃক্ষ রোপণ করছে। প্রকারান্তরে এই হাস্যকর উদ্যোগটি তাদের নিজেদের সুবিধার জন্যই গৃহীত, নিঃসন্দেহে যা পার্বত্য এলাকার স্বতন্ত্র প্রকৃতির জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ।

পার্বত্য অঞ্চলে তামাক পাতার চাষের সর্ববৃহৎ ক্রেতা বিএটি। তারপর রয়েছে ঢাকা টোব্যাকো ও আকিজ টোব্যাকো কোম্পানি। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কৃষকদের তামাক চাষের জন্য বিশেষ সুযোগ দেখানো হয়। কোম্পানি সরাসরি জমির মালিকের সাথে চুক্তি করে এবং একটি কার্ড দিয়ে থাকে, যার ফলে নানা সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি লোভের টোপ স্বরূপ কোম্পানির নিকট থেকে তারা আগাম অর্থ সহযোগিতাও পায়। অধিকন্তু, পাতার দাম আগেভাগেই ঘোষণা দিয়ে সহজ সরল কৃষকদের লোভকে উস্কে দিয়ে আরও উচ্চে তুলে দেয়া হয়।

২০০৯-১০ সালে কোম্পানিগুলো কৃষকদেরকে পাতার দাম বাড়িয়ে এবং নানা প্রলোভন দেখিয়ে আরও বেশি পরিমান জমি উৎপাদনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। ফলে কৃষক কোম্পানির দেয়া শর্তে নির্দিষ্ট পরিমান পাতা খোদ কোম্পানি নির্ধারিত দামেই সরবরাহ করতে বাধ্যা হয়। কার্যত কোম্পানি পরিকল্পিতভাবে কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদেরকে দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি চুক্তিতে বেঁধে ফেলে। তামাক চাষে প্রথম দিকে কিছু নগদ অর্থের আকর্ষণ সৃষ্টি হলেও ধীরে ধীরে কৃষক বুঝতে পারেন তারা আসলে কোম্পানির কাছে বাঁধা পড়েছেন এবং নানাবিধ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

খাদ্য শস্য উৎপাদন কমে গিয়ে দেখা দেয় খাদ্য সংকট। কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত অর্থ সারা বছরের খাদ্য ক্রয় এবং তামাক চাষের প্রভাবে সৃষ্ট নানা রোগের উপশমে ঔষধ ও চিকিৎসায় অপার্যাপ্ত হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয়রা ইতোমধ্যেই বুঝে গেছেন, তামাক চাষের ফলে রোগবালাই বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা তামাক পাতা থেকে ’গ্রিন টোব্যাকো সিকনেস’ গোত্রের নানা অসুখ দেখা দিচ্ছে। দুর্বলতা, মাথাব্যাথা, পেটব্যাথা, নানা ধরনের চর্মরোগ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও শ্বাসকষ্ট যার মধ্যে অন্যতম। এখানেই থেমে নেই, অনেকেই মরণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।

পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষপূর্ব পরিস্থিতিতে এসব রোগ ছিল না বললেই চলে। মৌসুমের আগেই কোম্পানি আবার যখন কৃষককে আগাম অর্থ দিতে আসে তখন তারা টাকা নেয় বটে, তবে তা ব্যয় হয়ে যায় খাদ্য পণ্য ক্রয় এবং ঔষধ চিকিৎসার পিছনে। যার ফলে পরের মৌসুমে তামাক চাষের জন্য কোম্পানির নিকট দায়বদ্ধ হয়ে পরেন। সেই সুযোগকে আবার কখনও কখনও কাজে লাগায় দুর্দিনের উদ্ধারকর্তাবেশী ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী বেসরকারী সংস্থাগুলি। পরিনতিতে কৃষক বাঁধা পরে এক ভয়াবহ ঋণের জালে।

পার্বত্য এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক পানি নির্ভর। সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীসহ পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ঢালু ও উর্বব জমিতে অবাধে তামাক চাষের কারণে এবং অতিমাত্রায় সার-কীটনাশক ও তামাকের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের ফলে নদী ও বিভিন্ন জলাশয়ের পানি ক্রমেই দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে প্রজননের মৌসুমে কীটনাশকযুক্ত পানির কারণে মাছ তার বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে। মানব সৃষ্ট নানাবিধ কারণে এ দেশের বনাঞ্চল এমনিতেই বন্য প্রাণীর অবস্থা প্রায় শুন্যে উপনীত হয়েছে। তার উপর তামাক ক্ষেতের বিষে আক্রান্ত কীটপতঙ্গ ও লতাপাতা ভক্ষণ করার কারণে পশু পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মৌমাছি, প্রজাপতি, ঘাসফড়িং, ব্যাঙ ও কেঁচোর মত কৃষির জন্য উপকারী প্রাণসম্পদ পর্যন্ত আমরা হারাতে বসেছি। কৃষকের বাড়িতে গরু ছাগল পালনও হ্রাস পাচ্ছে। স্বভাবতই তামাক চাষীর বাড়িতে গরু ছাগলের খাদ্য থাকে না। তাছাড়া চারণভূমিও নিরাপদ নয়। হাঁস-মুরগীর ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য, তামাক পাতার প্রভাবে কীটপতঙ্গ ও জলজ পোকামাকড় খেয়ে নানা রোগ-বালায়ে মারা যাচ্ছে। এসব কারণ ছাড়া আরও একটি শঙ্কার বিষয় হল, তামাক চাষ ও এর প্রক্রিয়াকরণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিশু-কিশোরদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম সম্মেলনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল’ (এফসিটিসি) নামক কনভেনশনে বাংলাদেশ ১৬ জুন, ২০০৩ তারিখে স্বাক্ষর এবং ১০ মে, ২০০৪ তারিখে অনুস্বাক্ষর করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে ১৫ই মার্চ ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে ‘ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ প্রণয়ন করে। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বা বিধান প্রণয়নকল্পে আইনটি তৈরি, যা ইতিবাচক বটে। আইনের ধারা ১২-তে উল্লেখ রয়েছে,

“তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও উহার ব্যবহার ক্রমাগত নিরুৎসাহিত করিবার জন্য উদ্বুদ্ধ এবং তামাকজাত সামগ্রীর শিল্প স্থাপন, তামাক জাতীয় ফসল উৎপাদন ও চাষ নিরুৎসাহিত করিবার লক্ষে সরকার প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবে।”

আইনের উল্লিখিত ধারার ভিত্তিতে যথাযথ বিভাগ বা কর্তৃপক্ষ কতটুকু ভূমিকা গ্রহণ করেছেন তা ক্রমবর্ধমান তামাক চাষের চিত্র দেখলে সহজেই অনুধাবন করা যায়। যাহোক, উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালে ভর্তুকি দেয়া সার তামাক চাষে ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয়। পরিতাপের বিষয় হলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন’ (বিএসটিআই) থেকে উৎপাদিত সার অবাধে তামাক চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। উল্লেখ্য, কোম্পানি কৃষকদের সরাসরি সার ও কীটনাশক সরবরাহ করে থাকে।

যেহেতু কৃষি জমিতে খাদ্য শস্য উত্পাদন না করে অখাদ্য ফসল (তামাক) চাষ করা যাবে কি না, এমন কোন নীতিমালা নেই, স্বভাবতই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগও এই ক্ষেত্রে কোন বাধা প্রদান করতে পারে না। বন বিভাগের চোখের সামনে তামাক চাষ এলাকায় বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক পরিমাণ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাধা দেয়া তো দূরের কথা বন বিভাগের দৃশ্যমান কার্যকর কোন ভূমিকা চোখে পড়ে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতীয়মান হয় প্রকৃতপক্ষে তাদের সেই ক্ষমতা নেই যে, কোম্পানিকে এই বৃক্ষনিধন লীলাযজ্ঞ থেকে বিরত রাখে। যা তাদের সামর্থ ও সদিচ্ছা উভয়কেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে কখনই এই বিষয়ে কার্যকর অনুসন্ধান বা উদ্বেগ প্রকাশ করতেও দেখা যায় না। বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংসে প্রত্যেকের ভূমিকা যে একই সূত্রে গাঁথা তা আরও বেশি পরিস্কার হয়ে যায়, যখন দেখি ২০০৫ সালে প্রণীত ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন’ এর খসড়ায় তামাক চাষ বন্ধের ব্যপারে সুনির্দিষ্ট কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মানুষের দায়বদ্ধতা নেই তা আমরা বলছি না। অধিকন্তু, তারা যে বিষয়টি নিয়ে ভাবেনা, সে কথা বলারও কোন সুযোগ নেই। তেমনিভাবে আমরা যারা এত ত্যাগ-তিতীক্ষা এবং জীবনের ঝু্ঁকি নিয়ে পা বাড়াই পাহাড়-পর্বত তথা প্রকৃতির টানে। তামাক চাষের এই খড়গকৃপাণে তাদের সংবেদনশীল অস্তিত্ব কি নির্বিকার থাকবে? তিলে তিলে বিনাশ হতে দেখবে মায়ের মত অকৃপণ প্রকৃতিকে? আমাদের করার কি কিছুই নেই? নাকি জীববৈচিত্রের ধ্বংসের দায় আমাদের সকলের, এই কথাটি মেনে নিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকব!

(লেখাটি রাইজিং বিডি ডক কম এ পূর্ব প্রকাশিত)

শেয়ারTweetপাঠিয়ে দিন
ফেরদৌস রলিন

ফেরদৌস রলিন

লেখক ও কবি-এই দুই সত্তার বাহিরে…নিখাদ পরিব্রাজক। ঘুড়ে বেড়িয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু জায়গা। সঙ্গীতে পারদর্শী মানুষটি পাহাড় ও প্রকৃতির সুরটিকেও আত্মস্থ করেছেন অসাধারণ নৈপুন্যে। বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তাঁর ভাবনার গন্ডি চিরচেনা জগতকেও ছাপিয়ে যায়। এসটিএইচএন এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

একইরকম লেখা

অন্য লেখাও এখনো পাওয়া যায় নি
আরো দেখতে
পরের আর্টিকেল
গঙ্গাপূর্ণার পাঁজরে রূপবতি মানাং

গঙ্গাপূর্ণার পাঁজরে রূপবতি মানাং

মন্তব্য ২

  1. Avatar সইকত says:
    3 বছর ago

    আমরদের এগিয়ে আস্তে হবে,এদের বিরুদ্ধে।

    জবাব
    • Avatar ferdous rolin says:
      3 বছর ago

      সঠিক বলেছেন। তবে কিভাবে এগিয়ে আসবো এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। উত্তরের অপেক্ষা না করে আপাদত লেখালেখির মাধ্যমে এগিয়ে এসেছি। আপনিও আসুন আপনার অবস্থান থেকে। যেভাবে পারেন এদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পরুন।

      জবাব

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আপনিও লেখা পাঠাতে পারেন

প্রিয় পাঠক, লিখুন। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। প্রকাশ করুন নিজের প্রতিভা। পাহাড় ও প্রকৃতি বিষয়ক যেকোনো লেখা সর্বোচ্চ ১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে, আপনার নিজের ছবি  সহ মেইল করতে পারেন আমাদের ইমেইল ঠিকানায়। চাইলে নীচের লিঙ্কের মাধ্যমেও পাঠাতে পারেন আপনার লেখা।

লেখা পাঠাতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

  • টপলিস্টে
  • মন্তব্য
  • সাম্প্রতিক
kopital_1

গিলাছড়ির চার বোন

জুন ২৫, ২০২০
দক্ষিণা হাওয়ায় পূবালী সমীরণ

দক্ষিণা হাওয়ায় পূবালী সমীরণ

এপ্রিল ৩, ২০২২
lewin

কল্প লোকের গল্প নয়

আগস্ট ৩০, ২০২০
Andes

আন্দিজ পর্বতমালা

এপ্রিল ৭, ২০২০
kopital_1

গিলাছড়ির চার বোন

18
lewin

কল্প লোকের গল্প নয়

10
bawm

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ‘বম’

9
human

বুদ্ধিমান প্রাণীকূলের স্বেচ্ছাচারিতা অতঃপর অসহায়ত্ব

7

Rumor calls out Windows 95 as the reason Microsoft skipped version 9

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২

Download Screen Recorder For Windows 10 Best Software & Apps

সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২

How to Upgrade Your Computer From Windows 8 to Windows 11

সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২

What is Exception EAccessViolation on in module ? Tom’s Guide Forum

সেপ্টেম্বর ২, ২০২২

পাঠকপ্রিয় আর্টিকেল

  • kopital_1

    গিলাছড়ির চার বোন

    131 shares
    শেয়ার 131 Tweet 0
  • দক্ষিণা হাওয়ায় পূবালী সমীরণ

    0 shares
    শেয়ার 0 Tweet 0
  • কল্প লোকের গল্প নয়

    0 shares
    শেয়ার 0 Tweet 0
  • আন্দিজ পর্বতমালা

    0 shares
    শেয়ার 0 Tweet 0
  • জুম : জীবিকা ও বাস্তবতা

    0 shares
    শেয়ার 0 Tweet 0

বিভাগ অনুসারে

  • Dating Online
  • Dll-Files
  • গবেষণা ও প্রবন্ধ
  • জলবায়ু
  • জীবন ও সংস্কৃতি
  • জীববৈচিত্র
  • দুর্যোগ
  • দূষণ
  • নদী ও জীবন
  • পর্বতারোহণ
  • প্রতিবেদন
  • বনাঞ্চল
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • ভ্রমণ
  • হিমালয়
Save The Hills & Nature

সবুজ অরণ্যঘেরা পাহাড় দেখে আমারা পুলকিত হই, মেঘের মিতালি দেখে হই বিমোহিত। আর যখন মেঘ আর সবুজ অরণ্য ঘেরা পাহাড়ে চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ঘর একাকি দাঁড়িয়ে, তখন ভাবনা আর ভাললাগার মাত্রাটি বৃদ্ধি পেয়ে যায় বহুগুণ।

সাম্প্রতিক খোঁজখবর

  • Rumor calls out Windows 95 as the reason Microsoft skipped version 9
  • Download Screen Recorder For Windows 10 Best Software & Apps
  • How to Upgrade Your Computer From Windows 8 to Windows 11
  • What is Exception EAccessViolation on in module ? Tom’s Guide Forum
  • Best dating sites

সামাজিক মাধ্যমে এসটিএইচএন

  • পরিচিতি
  • যোগাযোগ
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • ENGLISH

© ২০১৯ সেইভ দ্যা হিলস এন্ড নেচার কর্তৃক সকল অধিকার-স্বত্ত সংরক্ষিত - ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল

কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখতে চাই
  • নীড়
  • পরিচিতি
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু
    • দূষণ
    • দুর্যোগ
  • পর্বতকথা
    • বাংলাদেশ
    • বিশ্ব
    • হিমালয়
    • পর্বতারোহণ
  • বিভাগ
    • জীববৈচিত্র
    • বনাঞ্চল
    • নদী ও জীবন
    • ভ্রমণ
    • জীবন ও সংস্কৃতি
  • কার্যক্রম
    • প্রকৃতি পাঠ
    • প্রতিবেদন
    • গবেষণা ও প্রবন্ধ
  • ছবিঘর
  • যোগাযোগ

© ২০১৯ কপিরাইট সেইভ দ্যা হিলস এন্ড নেচার কর্তৃক সংরক্ষিত - ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল

error: Website is protected !!