Save The Hills & Nature
  • নীড়
  • পরিচিতি
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু
    • দূষণ
    • দুর্যোগ
  • পর্বতকথা
    • বাংলাদেশ
    • বিশ্ব
    • হিমালয়
    • পর্বতারোহণ
  • বিভাগ
    • জীববৈচিত্র
    • বনাঞ্চল
    • নদী ও জীবন
    • ভ্রমণ
    • জীবন ও সংস্কৃতি
  • কার্যক্রম
    • প্রকৃতি পাঠ
    • প্রতিবেদন
    • গবেষণা ও প্রবন্ধ
  • ছবিঘর
  • যোগাযোগ
Save The Hills & Nature
  • নীড়
  • পরিচিতি
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু
    • দূষণ
    • দুর্যোগ
  • পর্বতকথা
    • বাংলাদেশ
    • বিশ্ব
    • হিমালয়
    • পর্বতারোহণ
  • বিভাগ
    • জীববৈচিত্র
    • বনাঞ্চল
    • নদী ও জীবন
    • ভ্রমণ
    • জীবন ও সংস্কৃতি
  • কার্যক্রম
    • প্রকৃতি পাঠ
    • প্রতিবেদন
    • গবেষণা ও প্রবন্ধ
  • ছবিঘর
  • যোগাযোগ
Save The Hills & Nature
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখতে চাই

হীম রুক্ষ নীল সরোবর তিলিচো’র পথ

ফেরদৌস রলিন লিখেছেন ফেরদৌস রলিন
জানুয়ারী ১৯, ২০২০
বিভাগ ভ্রমণ
0
হীম রুক্ষ নীল সরোবর তিলিচো’র পথ

দীর্ঘ পথ চলার অন্তে প্রাণ যায় যায়! মনে মনে ভাবছি আর একা একা বিড়বিড় করছি, ঘরের ছেলে ঘরে ছিলাম কেন খামাখা মরতে এলাম। পর্বতের পাথুরে শরীরে তখনও পড়ে রয়েছি চিৎ হয়ে। খানিক পর চোখ দুটো ভালো করে মেলে দেখি, ঐ দূরে আমারই মত পড়ে রয়েছে এক নীল কাঁচের টুকরো। ঠিক তার আশপাশে খেলে যাচ্ছে ঝিলমিল মরিচিকা। বোঝার উপায় নেই তা আসলে এক টুকরো কাঁচ নাকি জলাশয়? আকাশের সমস্ত নীল বোধহয় নেমে এসে মিলেমিশে যাপন করছে এক সুদীর্ঘ অলস বেলা।

জানা যায় ‘তিলিচো’ পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৃহত্তম সরোবর বা লেক। কেউ বলে তিলিজো, কেউ বলে থিলিচু তো কেউ বলে তেলেজো, সে যাই হোক। ইয়োরোপ, আমেরিকা থেকে শুরু করে প্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্য তথা সারা বিশ্বের সৌখিন পর্বত আরোহীদের কাছে যা স্বপ্নের তীর্থস্থান পর্বত শৃঙ্গের দেশ নেপালের ওয়েস্টার্ন রিজিওনের খাংসারে এই সরোবরটি অবস্থিত। তিলিচো’র দর্শন নিতে চাইলে কঠোর পরিশ্রমী এবং পর্বতারোহণের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা যে জরুরী তা গিয়েই বুঝতে পারি। আর যদি আত্মবিশ্বাসের কথা বলি, বোধ করি তা ষোল আনাই থাকা চাই। নিজেদের স্বল্প সামর্থের মধ্যে খোঁজ খবর নিয়ে বেশ কিছু দিনের পরিকল্পনা এবং শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির পর্বটি যদি সেরে নিতে না পারতাম, তাহলে বিপত্তি বোধহয় একটা ঘটেই যেত।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ ’ফেওয়া তাল’ থেকে বাসে ও জিপে কয়েক ভাঙ্গা দিয়ে যেতে হল দানাকু পর্যন্ত। উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। জুমের সবুজ ধানক্ষেত অল্প বাতাসেই দুলে উঠছে। নেপালের জুম বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার মত নয় বরং পাহাড়ের শরীর কেটে সিঁড়ির মত করে বানানো। বসতির বাড়িগুলো ক্ষেতের সঙ্গে জড়ানো। প্রতিটি বাড়িই কাঠ বা পাথরের দেড় থেকে দুইতলা। চারপাশ ঘেরা কোন সীমানা প্রাচীর নেই, নেই কোন উঠান বা আঙ্গিনা। ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আইল পথে এগিয়ে গেলেই ঘরের দরজা। ছড়ানো ছিটানো অথচ সুশৃঙ্খল একেকটি বাড়ি। জটলা পাকানো গ্রাম নয়। ছবির মত গ্রামের পেছনে দীর্ঘ পাহাড়ের সারি। মাঝে মাঝে তারও পেছন থেকে মাথা উঁচিয়ে ধরা দেয় বরফ ঢাকা সাদা ধবধবে পর্বত শৃঙ্গ।

পর্বতের আজর-পাঁজর দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে এগোনো পথ। আবার কোথাও কোথাও পর্বতের দেয়াল খোদাই করে পথ বানানো হয়েছে। সে এক অসাধারাণ কারিগরি দক্ষতার প্রকাশ। এরই মধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে সপ্তাহ খানেক। বেসি শহর থেকে পায়ে হেঁটে বা ট্রেকিং করে খাংসার বেজক্যাম্প পর্যন্ত কয়েক দিনের পথ এরপর তিলিচো বেজক্যাম্প। রুক্ষ এলাকা, বাতাস বইছে আপন গতিতে, ক্লান্তিতে একটু খানি দাঁড়ালে ঠান্ডা বাতাস শরীরে তীরের ফলার মত বিঁধে যায়। মাথার উপর পাহাড়ের ঢালু শরীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিম্ভুতকিমাকার একেকটি পাথর। যেন আইসক্রিম, কাঠি বা ডাটের উপর দন্ডায়মান; এক্ষুণি টুপ করে ভেঙ্গে পড়বে।

চলতি পথে কোন এক পোর্টারের কাছ থেকে যখন জানতে পেলাম, অল্প দিন আগে এইখানটায় পাথর চাপায় কয়েকজন চাইনিজ পর্বত আরোহীর মৃত্যু হয়েছে অমনি পা দুটো যেন পথের মধ্যে গেঁথে গেল। পথিমধ্যে কোন এক মাংসের দোকান থেকে একশত রুপীতে কেনা লাঠি দুটো বারবারই ফেলে দিতে চেয়েছি। কিন্তু ঐ একশত রুপীর মায়ায় তা পেরে উঠিনি। পথের এই অংশ পাড়ি দিতে গিয়ে বুঝতে পারি তার আসল কার্যকারিতা। ভীষণ ঢালু পাহাড়ের পেট দিয়ে সরু রেখার মত পথ। ঠিক পেছন দিয়ে বরফের দীর্ঘ ছাদ। জায়গায় জায়গায় সতর্র্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি, ‘ল্যান্ড স্লাইড এরিয়া, স্টেপ জেন্টলি’। আর নিচে তাকালে তো পিলে চমকে উঠার উপক্রম।

পর্বত আরোহণে একটা মাত্রার উচ্চতা অতিক্রম করার পর স্বাভাবিকভাবেই শরীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর সেই যে মাথা ধরল; বিকেল সাড়ে চারটায় তিলিচো বেজক্যাম্পে গিয়েও তা বহাল আছে একই মাত্রায়। ক্যাম্পের অবস্থান ৪১৫০ মিটার উঁচুতে তার চারিধারে সুউচ্চ পর্বত। না জানি সেগুলোর উচ্চতা আরও কত হয়ে থাকবে? এখানে থাকার জায়গা মাত্র তিনটি। প্রথমটা বড়সর কিন্তু জায়গা মিললো না। ইসরাইলি ও পশ্চিমা অভিযাত্রীতে ঠাসা, শরীরকে মনিয়ে নিতে তাদের মধ্যে অনেকে দু’এক দিন আগে থেকেই অবস্থান করছে। সেদিন অব্দি শ্বেত বর্ণের অভিযাত্রীর ভীড়ে কেবল আমরাই কালো।

সেই সুবাদে কয়েক দিনে প্রায় সকলেরই মুখ চেনা হয়ে গেছি। আলাপচারিতায় যখন জানতে পারে আমরা বাংলাদেশ থেকে আগত, তখন তো কারও কারও কপালে ফুটে ওঠে বিস্ময়ের কালো রেখা! যাহোক, একশ মিটার তফাতে অন্য হাউজটিতে থাকার ব্যাবস্থা হল। ঘর তো নয় যেন একটা খুপরি। কবর বললেও ভুল হবে না। রাতে আলোর ব্যাবস্থা নেই শুনে মাথা ব্যাথা চড়ে গেল কয়েক গুণ। মোবাইল ফোন সেটের আলোই একমাত্র ভরসা। অন্যরা আগে থেকেই কপালে হেড লাইট লাগিয়ে রেখেছে। পাথরের দেয়াল, ভেতর থেকে গুড়ো পাথরের প্রলেপ দেয়া। ছোট্ট ঘরটিতে থাকতে হবে তিন তিন জন মানুষ। ভয়ে আমার তিলিচো দেখার সাধ মিটে গেল। আশপাশে কোনো বসতি নেই তার উপর দিয়ে প্রচন্ড শীত। সর্ব পেছনের ক্যাম্প শ্রীখারকা ফেলে আসা হয়েছে কয়েক ঘন্টা আগে। অতএব মৃত্যু অবধারিত জানলেও এখানে থেকে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

পাশাপাশি সংযুক্ত তিনটি বিছানা। নিজের জন্য জায়গা করে নিলাম মাঝেরটাতে। ডানে বামে দুই সহযোদ্ধা সেরাজুল মুস্তাকিম ও ভাট্টি রায়হান। বিছানা পেয়েই তাঁরা ঘুমে বিভোর। ভাট্টি ভাইয়ের নাকের গর্জনে তো দেয়াল থেকে পলেস্তার খুলে পরার উপক্রম। রাতের খাবার পরিবেশিত হবে সাতটায়, বাজে মাত্র সাড়ে পাঁচটা। দেশ থেকে নেয়া হাতে বানানো বাদাম ও আখের গুড়ের লাড়ু সমস্ত পথেই বেশ কাজে দিয়েছে। আপাতত এ পর্বেও তা দিয়েই চালিয়ে নিতে হল। যেখানেই যাই না কেন নিজ হাতে বানানো এই সমস্ত খাবার আমার ব্যাকপ্যাকের অন্যতম রসদ।

আমার এই স্বভাবে অন্যদের দ্বিমত ও বিরক্তি দুটোই, কোথায় ভালো মানের ক্যান্ডি, চকোলেট, টিনজাত খাবার সাথে থাকবে, তা নয় টেনে আনবে এই সমস্ত মুয়া-মুর্কি! যাহোক, ঠান্ডায় বাহিরে যাওয়া দুস্কর। রাত কিভাবে কাটবে সে ভাবনায় বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি। ডাইনিং-এর চেহারা সুরতে পশ্চিমা সিনেমার সেই প্রাচীন নগর-রাষ্ট্রের রেস্টুরেন্টগুলোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কড় কড় শব্দ করা কাঠের মজবুত দরজা, আসবাবপত্র ও পাথরের দেয়াল। মোটকথা সাজসজ্জায় এক ধরণের প্রাচীন ভাব। ডাইনিং-এ বেশ ভিড়। উপস্থিত সকলের মধ্যে ইসরাইলিদের আধিক্য লক্ষণীয়।

বরাবরই লক্ষ করেছি নেপালের এই সমস্ত ট্রেইলে একক রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলিদের সংখ্যা সর্বাধিক এবং তারা বড় বড় দলে ঘুরতে আসে। তবে নেপাল ভ্রমনের ক্ষেত্রে তাঁরা মৌসুমের বিশেষ একটা সময়কে বেছে নেয়। চারপাশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর এবার আস্তে করে একটা চেয়ার টেনে বসে লক্ষ্য করি সেলফ-এ সাজানো পর্বত আরোহণ বিষয়ক ও লোনলি প্ল্যানেটের কয়েকটা বই। তার মাঝ থেকে একটা নিয়ে নাড়াচারা করতে করতে কখন যে অন্ধকারে ঢেকে গেছে চারিদিক তা টেরই পাইনি। এখানেই পরিচয় হয় এক অশীতিপর মার্কিন তরুণের সাথে। হ্যালো ইয়াংম্যান, বলে আস্তে করে একটা চেয়ার টেনে যুক্ত হন আমার একক আসরে। সত্তর ঊর্ধ্ব এই মার্কিন অভিযাত্রীর জীবন থেকে শোনা হল বেশ কিছু অভিজ্ঞতার কথা।

আজ পাড়ি দিতে হবে ৮৪০ মিটার উচ্চাতার পথ। সূর্যের আলো ফুটে বেরোবার আগেই রওনা করি। পথে কমপক্ষে চল্লিশ জন অভিযাত্রী, লাইন ধরে উঠছে, কারও মুখে কোনো কথা নেই। ভোরের আলোর স্পর্শে বরফ ঢাকা আশপাশের সমস্ত শৃঙ্গ ঝলমলিয়ে উঠল। নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী এখনও দৃশ্যমান, তবে তা যেন নদী নয় চিকন একটা নালা। মেঘের স্তর ভেদ করে উঠে যাই আরও উপরে। অর্ধেকেরও বেশি পথ ল্যান্ড স্লাইড এরিয়ার মাঝ দিয়ে। ৪১৫০ থেকে শুরু করে ৪৯৯০ মিটার উচ্চতা এক টানে এত অল্প সময়ের মধ্যে পাড়ি দেয়া আমার মত সৌখিন আরোহীর জন্য নিঃসন্দেহে বিপদজনক।

অনেকেরই শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিল। একজন ইসরাইলি নারীর সমস্যা এতটাই তীব্র আকার ধারণ করল যে তাঁকে সঙ্গীসহ নিচে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে হল। এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ কানে ভেসে আসে বজ্রপাতের মত মাঝারি এক শব্দ। তা যেন ছোট হতে হতে সুক্ষ হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে। অথচ ক্রমেই এগিয়ে আসছে নিকটে। ওমনি থমকে গেল সমস্ত ট্রেইল! পাশেই পর্বতের পেট থেকে তুষার ধস ঘটেছে। যে যার ক্যামেরা বের করে অজস্র ক্লিক করতে থাকল।

নেপালের এই সমস্ত গন্তব্যে সর্বাধিক সংখ্যক পর্বত আরোহী বা পর্যটক ইসরাইলি কেন? এই কৌতুহল আমার নতুন নয়। ট্রেকিংয়ের এক পর্যায়ে প্রায় ঘন্টাখানেকের মত হাঁটছিলাম এক ইসরাইলি নারী লেফটেন্যান্টের সাথে। তাঁর নিকট জানতে পারি ইসরাইলের সকল নাগরিকের জন্য সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। দুই তিন বছরের শিক্ষা শেষে পাঁচ ছয় মাসের বিদেশ ভ্রমণ বা পর্বত আরোহণ তাদের ঐতিহ্য। যার অংশ হিসেবে নেপাল হল তাদের প্রথম পছন্দের জায়গা। অধিকন্তু যে কোনো প্রকার ভ্রমণের জন্যও তারা নেপালকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

অবশেষে নীল জলের সরোবর তিলিচো আমার চোখের সামনে। আয়তন ৪.৮ বর্গ কিলোমিটার এবং গড় গভীরতা ৮৫ মিটার। চারিপাশের পবর্তের বরফ গলা প্রবাহই তিলিচোর প্রাণ। পানির ধরন একেবারেই সতেজ কিন্তু আশ্চর্য রকমে কোন প্রাণী নেই। এমন জায়গায় এসে দু’চারটা ছবি না তুলে ফিরে যাওয়া অন্যায়ের সামিল। কার কাছে গিয়ে দুটো ছবি তুলে দেয়ার মিনতি পেশ করি? মিনতি একজন রেখেছে তবে বিনিময়ে তাকেও তুলে দিতে হয়েছে কয়েক ডজন। এখানে কেউ বেশি অপেক্ষা করে না, কারণ ফিরতি পথ অনেক দীর্ঘ। কিন্তু আমার তো উপায় নেই, সহযাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। ওদিকে হীম বাতাসে টেকা কঠিন। দেড়-দুইশ গজ দূরে অপেক্ষাকৃত উঁচুতে পাথরের একটা স্তুপ।

অভিযাত্রীরা স্থানীয় সংস্কারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন স্বরূপ পাথরের উপর পাথর রেখে যায়। এমনি করে কোন একটা সময় তা ক্ষুদ্রাকৃতির চূড়ায় রূপ নেয়। আপাতত এইটাই হতে পারে টিকে থাকার সহজ উপায়। চূড়ার আড়ালে আধ-শোয়া হয়ে অপেক্ষা করতে হল। তাতে করে অন্তত বাতাস থেকে কিছুটা রক্ষা পওয়া গেল। পাশেই সাদা ধবধবে ছোপ ছোপ বরফ। পাথরের গায়ে গায়ে লেগে থাকা মড়মড়ে বরফ। ইয়োরোপের রাস্তায় পরে থাকা দুর্ভোগের বরফ নয় বরং ষোল হাজার ফুট উঁচুর বরফ, আকাশের কাছাকাছির বরফ! অনুভূতি ভাগাভাগি করার কেউ নেই।

উত্তেজনায় এগিয়ে গিয়ে প্রথমে স্পর্শ করি, হাত হীম হয়ে গেল। তারপর বিস্ময়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকা। পথের দিকে লম্বা করে তাকালাম, কোথায় আমার সহযাত্রীরা! কার সাথে অনুভূতির গল্প করি? এরূপ সংকটে সাহারা হয়ে পাশে দাঁড়ালো আমার ছোট্ট ক্যামেরা। লোভ সংবরণ করতে না পেরে একটি বরফের ছোপ থেকে এক চাপড় ভেঙ্গে নিয়ে হাতে ধরে দেখি তার ওজন, গড়ন, রং, স্বাদ, গন্ধ আরও কত কি তার ঠিক নেই।

সহযাত্রীদের আরোহণের পর স্বাধ মিটিয়ে উপভোগের শেষে ধরতে হল চটজলদি ফিরতি পথ। বেজক্যাম্পে ফিরে এক থালি করে আচার মেশানো আলুর দম খেয়ে দ্বিতীয় দফা ট্রেকিং শুরু। শারীরিক অবস্থা সকলেরই কাহিল। রাতে শ্রীখারকা বেজক্যাম্পে থাকার পরিকল্পনা থাকলেও বাধ্য হয়ে উঠতে হল তার দেড় কিলোমিটার আগেই ‘ব্লুশীপ’ নামক এক টি-হাউজে। প্রথমত ক্লান্ত, দ্বিতীয়ত অযাচিত ভীড় এড়ানো। শুনশান নিরবতা, কাছেকুলে নেই কোনো বসতি, নেই কোনো মানুষ, একাকি একখানা পাহাড় চূড়ায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে সদ্য নির্মিত দুইতলা টি-হাউজ ‘ব্লুশীপ’।

নিকটেই পর্বতের ঢালে নিঃশব্দে আপন মনে চড়ে বেড়াচ্ছে দু’চারটি ব্লুশীপ । ছাগল আকৃতির ছড়ানো মোটা শিংওয়ালা প্রাণীটির নাম কেন ব্লুশীপ হল তা অজানাই থেকে গেল। খুঁটে খুঁটে খাচেছ ন্যাড়া ঝোপের ছোট ছোট গুল্ম-লতা। এখানে অতিথি বলতে শুধু মাত্র পাঁচ জন। আমরা তিন, এক স্প্যানিশ পর্যটক এবং সব শেষ সেই মার্কিন বৃদ্ধ। যে যার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ধীরে ধীরে জড়ো হল ডাইনিংয়ে। তীব্র ঠান্ডা নিবারণে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ঘর গরম করার চুলায় আগুন জ্বালানো সম্ভব হল। জমে উঠল এক দীর্ঘ আড্ডা। বৃদ্ধের তিব্বতিয়ান চা পান করা দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজের জন্যও একটা অর্ডার করি।

পন্ডিত রাহুলজী’র লেখায় এই চায়ের কথা এবং বর্ণনা অনেক পেয়েছি। প্রথম চুমুকের অভিজ্ঞতায় মনে হবে যেন সাদা দই গরম করে দেয়া হয়েছে। পান করে যে অনেক তৃপ্তি পেয়েছি তা বলব না, তবে মোটের উপর তৃপ্তি ওই একটাই, তিব্বতিয়ান চা! কাঁচ ঘেরা ডাইনিং, বাইরের এক দিক বাদে তিন দিকেই ফাঁকা, বহু দূর পর্যন্ত দেখা যায়। অসাধারণ দৃশ্য! বৃদ্ধ একে একে পরিচয় করিয়ে দেন, বাম পাশে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মাউন্ট মানাসলু এবং লুমঝুং; সম্মুখে গঙ্গাপূর্ণা ও অন্যপূর্ণা-৩’ সর্ব বামে পিরামিড আকৃতি নিয়ে ধ্যানমগ্ন মাউন্ট পিসাং।

পথে প্রান্তরে পরে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার সার সংকলন করতে গেলে অনুধাবন করা যায়, ভ্রমণ একজন মানুষকে কতটা সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে। যাকে এতক্ষণ বৃদ্ধ বলে সম্বোধন করে আসছি তিনি আসলে আমার চোখে দেখা একজন উজ্জীবিত তরুণ, যে তারুণ্য বয়সের মাপকাঠিতে বিচার করা যায় না। এই তরুণের একটা কথা দিয়ে শেষ করা যায়-

“গন্তব্যে পৌঁছা অপেক্ষা গন্তব্যের পথকে অর্থবহ করে তোলার মাঝেই নিহিত প্রকৃত স্বার্থকতা।”

ছবি : লেখক ও হাদি মুন।

শেয়ারTweetপাঠিয়ে দিন
ফেরদৌস রলিন

ফেরদৌস রলিন

লেখক ও কবি-এই দুই সত্তার বাহিরে…নিখাদ পরিব্রাজক। ঘুড়ে বেড়িয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু জায়গা। সঙ্গীতে পারদর্শী মানুষটি পাহাড় ও প্রকৃতির সুরটিকেও আত্মস্থ করেছেন অসাধারণ নৈপুন্যে। বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তাঁর ভাবনার গন্ডি চিরচেনা জগতকেও ছাপিয়ে যায়। এসটিএইচএন এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

একইরকম লেখা

1
ভ্রমণ

বনের পথে প্রাণের পথে

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
গঙ্গাপূর্ণার পাঁজরে রূপবতি মানাং
ভ্রমণ

গঙ্গাপূর্ণার পাঁজরে রূপবতি মানাং

জানুয়ারী ১৯, ২০২০
আরো দেখতে
পরের আর্টিকেল
চিটাগাং বাইসন : গয়াল নামে আমরা চিনি

চিটাগাং বাইসন : গয়াল নামে আমরা চিনি

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আপনিও লেখা পাঠাতে পারেন

প্রিয় পাঠক, লিখুন। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। প্রকাশ করুন নিজের প্রতিভা। পাহাড় ও প্রকৃতি বিষয়ক যেকোনো লেখা সর্বোচ্চ ১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে, আপনার নিজের ছবি  সহ মেইল করতে পারেন আমাদের ইমেইল ঠিকানায়। চাইলে নীচের লিঙ্কের মাধ্যমেও পাঠাতে পারেন আপনার লেখা।

লেখা পাঠাতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

  • টপলিস্টে
  • মন্তব্য
  • সাম্প্রতিক
kopital_1

গিলাছড়ির চার বোন

জুন ২৫, ২০২০
দক্ষিণা হাওয়ায় পূবালী সমীরণ

দক্ষিণা হাওয়ায় পূবালী সমীরণ

এপ্রিল ৩, ২০২২
lewin

কল্প লোকের গল্প নয়

আগস্ট ৩০, ২০২০
Andes

আন্দিজ পর্বতমালা

এপ্রিল ৭, ২০২০
kopital_1

গিলাছড়ির চার বোন

18
lewin

কল্প লোকের গল্প নয়

10
bawm

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ‘বম’

9
human

বুদ্ধিমান প্রাণীকূলের স্বেচ্ছাচারিতা অতঃপর অসহায়ত্ব

7

Rumor calls out Windows 95 as the reason Microsoft skipped version 9

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২

Download Screen Recorder For Windows 10 Best Software & Apps

সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২

How to Upgrade Your Computer From Windows 8 to Windows 11

সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২

What is Exception EAccessViolation on in module ? Tom’s Guide Forum

সেপ্টেম্বর ২, ২০২২

পাঠকপ্রিয় আর্টিকেল

  • kopital_1

    গিলাছড়ির চার বোন

    131 shares
    শেয়ার 131 Tweet 0
  • দক্ষিণা হাওয়ায় পূবালী সমীরণ

    0 shares
    শেয়ার 0 Tweet 0
  • কল্প লোকের গল্প নয়

    0 shares
    শেয়ার 0 Tweet 0
  • আন্দিজ পর্বতমালা

    0 shares
    শেয়ার 0 Tweet 0
  • জুম : জীবিকা ও বাস্তবতা

    0 shares
    শেয়ার 0 Tweet 0

বিভাগ অনুসারে

  • Dating Online
  • Dll-Files
  • গবেষণা ও প্রবন্ধ
  • জলবায়ু
  • জীবন ও সংস্কৃতি
  • জীববৈচিত্র
  • দুর্যোগ
  • দূষণ
  • নদী ও জীবন
  • পর্বতারোহণ
  • প্রতিবেদন
  • বনাঞ্চল
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • ভ্রমণ
  • হিমালয়
Save The Hills & Nature

সবুজ অরণ্যঘেরা পাহাড় দেখে আমারা পুলকিত হই, মেঘের মিতালি দেখে হই বিমোহিত। আর যখন মেঘ আর সবুজ অরণ্য ঘেরা পাহাড়ে চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ঘর একাকি দাঁড়িয়ে, তখন ভাবনা আর ভাললাগার মাত্রাটি বৃদ্ধি পেয়ে যায় বহুগুণ।

সাম্প্রতিক খোঁজখবর

  • Rumor calls out Windows 95 as the reason Microsoft skipped version 9
  • Download Screen Recorder For Windows 10 Best Software & Apps
  • How to Upgrade Your Computer From Windows 8 to Windows 11
  • What is Exception EAccessViolation on in module ? Tom’s Guide Forum
  • Best dating sites

সামাজিক মাধ্যমে এসটিএইচএন

  • পরিচিতি
  • যোগাযোগ
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • ENGLISH

© ২০১৯ সেইভ দ্যা হিলস এন্ড নেচার কর্তৃক সকল অধিকার-স্বত্ত সংরক্ষিত - ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল

কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখতে চাই
  • নীড়
  • পরিচিতি
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু
    • দূষণ
    • দুর্যোগ
  • পর্বতকথা
    • বাংলাদেশ
    • বিশ্ব
    • হিমালয়
    • পর্বতারোহণ
  • বিভাগ
    • জীববৈচিত্র
    • বনাঞ্চল
    • নদী ও জীবন
    • ভ্রমণ
    • জীবন ও সংস্কৃতি
  • কার্যক্রম
    • প্রকৃতি পাঠ
    • প্রতিবেদন
    • গবেষণা ও প্রবন্ধ
  • ছবিঘর
  • যোগাযোগ

© ২০১৯ কপিরাইট সেইভ দ্যা হিলস এন্ড নেচার কর্তৃক সংরক্ষিত - ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল

error: Website is protected !!